বিদ্যুৎ-চাহিদায় রেকর্ড, জোগানে অভয় কর্তাদের

মরুশহরকে টেক্কা দিয়ে রেকর্ড করছে কলকাতার গরম। পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ-চাহিদারও রেকর্ড হল সিইএসসি এবং বণ্টন সংস্থা দুই এলাকাতেই। সোমবার কলকাতা ও হাওড়া মিলিয়ে সিইএসসি-র বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯৮৩ মেগাওয়াট। এটা ১২০ বছরের ওই সংস্থার অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পিছিয়ে নেই রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকাও। সম্প্রতি এক দিন সেখানে চাহিদা পৌঁছে যায় ৫৩৮০ মেগাওয়াটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

মরুশহরকে টেক্কা দিয়ে রেকর্ড করছে কলকাতার গরম। পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ-চাহিদারও রেকর্ড হল সিইএসসি এবং বণ্টন সংস্থা দুই এলাকাতেই।

Advertisement

সোমবার কলকাতা ও হাওড়া মিলিয়ে সিইএসসি-র বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯৮৩ মেগাওয়াট। এটা ১২০ বছরের ওই সংস্থার অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পিছিয়ে নেই রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকাও। সম্প্রতি এক দিন সেখানে চাহিদা পৌঁছে যায় ৫৩৮০ মেগাওয়াটে। বিদ্যুতের এতটা চাহিদা বণ্টন এলাকাতেও আগে কখনও হয়নি।

বিদ্যুৎ-চাহিদার জোড়া রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রশ্নও ভাবাচ্ছে ভুক্তভোগীদের। এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়নি ঠিকই। তবে আকাশ যদি আরও কিছু দিন কৃপণ থাকে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে কি? চাহিদার চাপে আবার বিদ্যুৎ পরিষেবায় কোনও বিপর্যয় নেমে আসবে না তো?

Advertisement

রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তারা অবশ্য কোনও বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এপ্রিল থেকে টানা গরম চলছে। কিন্তু মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পৌঁছেও চাহিদা আর জোগানে কোনও রকম ফারাক তৈরি হয়নি। আরও ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুতের দরকার পড়লেও পরিষেবায় কোনও ঘাটতি হবে না বলে ওই কর্তাদের দাবি।

এই দাবি সব দিক থেকে প্রস্তুতির ভিত্তিতেই। প্রস্তুতিটা কী রকম?

l গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে এখন সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। সংস্থা সূত্রের খবর, নিগম এখন বণ্টন সংস্থাকে ২৭০০ থেকে ২৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে। তবে প্রয়োজনে তাদের ৩১০০-৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। l কোল ইন্ডিয়া থেকে কয়লার জোগানে যাতে কোনও খামতি না-থাকে, সে-দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। l এনটিপিসি, এনএইচপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলির কাছ থেকে যাতে জরুরি প্রয়োজনে বাড়তি বিদ্যুৎ কেনা যায়, সেই ব্যাপারে আগে থেকেই চুক্তি করা আছে। l চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে পুরুলিয়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। l অন্য রাজ্যকে তাদের প্রয়োজনের সময় পশ্চিমবঙ্গ যে-বিদ্যুৎ দিয়ে রেখেছিল, এখন তাদের কাছ থেকে তা-ও নেওয়া হচ্ছে (একে বলে বিদ্যুৎ-ব্যাঙ্ক করে রাখা)।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “বড় ধরনের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে উৎপাদনের সমস্যা না-হলে জোগানে ঘাটতি থাকবে না।” তিনি জানান, গ্রীষ্মে এই ধরনের প্রয়োজন হতে পারে ভেবে আগেই যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সেরে রাখা হয়।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান তুলনায় খারাপ। তবে এ বছর এখনও পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের জেরে বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর বা রাস্তা অবরোধের খবর পাওয়া যায়নি। এ বার গরমে শুধু রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকাতেই কয়েক দিন আগে বিদ্যুতের চাহিদা পৌঁছয় ৫৩৮০ মেগাওয়াটে।

রাজ্যের নিরিখে এখনও পর্যন্ত এটাই রেকর্ড চাহিদা। বণ্টন এলাকায় গত বছর সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৫০৩১ মেগাওয়াট। গ্রীষ্মের চরিত্রও যেমন বদলেছে, পাশাপাশি কবে, কোন সময় বিদ্যুতের চাহিদা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা-ও আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তাই যে-কোনও দিন হঠাৎ চাহিদা ২০০-৩০০ মেগাওয়াট বেড়ে যেতে পারে ধরে নিয়েই জোগানের ব্যবস্থা করে রাখছেন বিদ্যুৎকর্তারা। সেই জন্য প্রতিটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত কয়লাও মজুত রাখা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন