ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়েই নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৮টি রাজ্যে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আজ সকাল থেকে দশ নম্বর জনপথে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় কমিটির ম্যারাথন বৈঠক হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে দলীয় তরফে প্রার্থী তালিকা এখনও ঘোষণা করা হয়নি ঠিকই। কিন্তু সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের ১৬টি আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই তালিকায় দলের বর্তমান ৬ জন সাংসদের নামও রয়েছে। তাতে আজহারউদ্দিনের নাম ঠাঁই পায়নি।
অবশ্য রাজ্যের বাকি ২৬টি আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কিন্তু জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আজহার নিজেই খুব একটা উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। উল্টে অন্য রাজ্য থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তিনি।
এ হেন পরিস্থিতিতে আজহারের ব্যাপারে দলীয় হাইকম্যান্ডকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, ওঁর মতি স্থির নেই। লোকসভায় তাঁর ঠিক পিছনে বসেন আজহার। অধীরবাবু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি আজহার তাঁকে বলেছেন, তিনি আর মোরাদাবাদে প্রার্থী হতে চান না। সেখানকার কংগ্রেস নেতারা তাঁর সঙ্গে ভাল করে কথা পর্যন্ত বলেন না। অধীরবাবু পাশে দাঁড়ালে তিনি মুর্শিদাবাদ বা জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী।
কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বর্তমান সাংসদদের সরিয়ে তাঁকে মুর্শিদাবাদ বা জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী করতে পারবেন না তিনি। পরিবর্তে আজহারকে বসিরহাট থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন অধীর। একই সঙ্গে অধীরবাবু কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে এ-ও জানান যে, হাওড়া, উলুবেড়িয়া বা কৃষ্ণনগরের মতো লোকসভা কেন্দ্র থেকেও প্রার্থী করা যেতে পারে আজহারকে। বিশেষ করে বসিরহাট বা কৃষ্ণনগর থেকে আজহারের জয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এ কথা শোনার পর আজহার প্রথমে রাজি হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে তিনি প্রার্থী হলে তৃণমূল যাতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেয়, সে জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের তরফে ইতিবাচক সাড়া না মেলায় ইদানীং আজহারের উৎসাহে ভাটা দেখা যাচ্ছে। বাংলার পরিবর্তে এখন অন্য রাজ্য থেকেও ভোটে লড়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন তিনি।
কংগ্রেস কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আজ আজহারের বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলেই কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরের নেতারা দাবি করছেন। এ বিষয়ে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের সঙ্গেও আজ সন্ধ্যায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর পরিবারের তরফে বলা হয়, “ওঁর জ্বর হয়েছে। এখন ঘুমোচ্ছেন।”
তবে আজহারকে কেন্দ্র করে এই অনিশ্চয়তা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ৬ জন সাংসদ ছাড়া আরও ১০ জন প্রার্থীর নাম একপ্রকার চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে আজ। কোচবিহারে কেশবচন্দ্র রায়, আলিপুরদুয়ারে যোশেফ মুন্ডা, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে সুখবিলাস বর্মা, বালুরঘাটে ওমপ্রকাশ মিশ্র, বারাসতে ঋজু ঘোষাল, দক্ষিণ কলকাতায় মালা রায়, কলকাতা উত্তরে সোমেন মিত্র, পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতো, ডায়মন্ড হারবারে কামারুজ্জামান কামার এবং রানাঘাটে প্রতাপকান্তি রায়। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, এই ১৬ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার পাশাপাশি হাইকম্যান্ডের বিবেচনার জন্য আরও একটি তালিকা আজ পেশ করেছেন অধীর চৌধুরী। সেই তালিকায় প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, শঙ্কর সিংহ-সহ রাজ্য কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের নাম রয়েছে। ওই প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার ব্যাপারে অবশ্য নির্বাচন কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে। ১২ তারিখে সেই বৈঠক হবে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্যের বাকি ২৬টি আসনে সে দিনই প্রার্থী নির্বাচন চূড়ান্ত হয়ে যাবে।