প্রেস ক্লাবে পাঁচ বাম প্রার্থী। শুক্রবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।
রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটের ছবি দেখে নির্বাচন কমিশনের উপরে আস্থা টলে গিয়েছে। তবু ভয়-ভীতি উপেক্ষা করেই শেষ দফার নির্বাচনের দিন মানুষ ভোট দিতে বেরোবেন বলে দাবি করলেন উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থীরা। প্রশাসনের উপরে ভরসা না-থাকলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বুথে যেতে মানুষের কাছে আহ্বানও জানান তাঁরা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে একই সঙ্গে কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টির কৌশলই নেওয়া হল বলে বাম সূত্রের ব্যাখ্যা। ওই পাঁচ কেন্দ্রে ভোট ১২ মে।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে শুক্রবার ব্যারাকপুর, দমদম ও বনগাঁর সিপিএম প্রার্থী যথাক্রমে সুভাষিণী আলি, অসীম দাশগুপ্ত ও দেবেশ দাস একযোগে আম জনতার ভোট দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা বলেছেন। শাসক দলের সন্ত্রাস বা ভয়-ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টায় কোনও লাভ হবে না বলে দাবি করেছেন বারসতের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী মোর্তাজা হোসেন ও বসিরহাটের সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদাও। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেখা গোস্বামী এবং সিপিআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। অসীমবাবু জানান, মূলত পায়ে হেঁটে প্রচারে বেরিয়ে এ বার তাঁরা মানুষের ভাল সাড়া পাচ্ছেন। অনেকেই এগিয়ে এসে বাম প্রার্থীকে মনের কথা জানাচ্ছেন। অসীমবাবুর বক্তব্য, “কমিশনের পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠকে আমরা দাবি করেছি, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভোটের অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে টহল দেওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আগাম গ্রেফতারির ব্যবস্থাও চাই।”
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে আমডাঙা ও বীজপুর বিধানসভা এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয় বলে অভিযোগ করে সুভাষিণী বলেন, “চার পাশে অনেক ঘটনা ঘটছে। তবে লোকে তাতে ভয় পাবে না। প্রশাসনের উপরে বিশেষ ভরসা না রেখেই তারা ভোট দিতে যাবে।” প্রথম যখন প্রচারে গিয়েছিলেন, তার চেয়ে বীজপুরে এখন তাঁদের কর্মসূচিতে বেশি সাড়া মিলছে বলে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থীর দাবি। সুভাষিণীর কথায়, “আমডাঙায় মহিলারাই এগিয়ে এসে তাঁদের উপরে অত্যাচারের কথা আমাদের জানিয়েছেন। আর বীজপুরে তো স্থানীয় বিধায়ক এতই ক্ষমতাশালী যে, দেশের সংবিধান সেখানে এসে থেমে যায়! তবে এই সব গুন্ডামির ফলে মানুষের মন আরও শক্ত হয়েছে।” দেবেশবাবুর বক্তব্য, গত লোকসভা, বিধানসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে যাঁরা মুখ ফিরিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ বার বামেদের কথা শুনতে আসছেন। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, নারী নির্যাতন এবং পরের পর দুর্নীতির ঘটনার জন্যই তৃণমূলের উপরে মানুষ ক্ষুব্ধ বলে প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি। সাংগঠনিক ক্ষমতা কমে গিয়েছে বলেই কি তাঁরা এ বার কমিশনের উপরে বেশি নির্ভর করছেন? রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবুর বক্তব্য, “কমিশনের কাছে যথাবিহিত ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি। সাংগঠনিক ভাবেও আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা তৈরি আছেন। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট সম্পাদনে কমিশনের নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। তৃতীয় দফার ভোটে তাদের ভূমিকায় আমরা একেবারেই খুশি নই।”