মাওবাদীরা তৎপর চা-বলয়ে, মত পুলিশের

চা-শ্রমিকদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে জাল ছড়াতে সক্রিয় হয়েছে মাওবাদীরাএমনই দাবি পুলিশের। মালবাজারের সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা হত্যার তদন্তে নেমে ওই ব্যাপারে কিছু সূত্র পেয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, রাজেশ-খুনের পরে বাগানের কয়েকজন শ্রমিককে ‘লড়াকু অভিনন্দন’-এর বার্তা দিয়েছে মাওবাদীরা। তাদের এই তৎপরতার খবর পৌঁছেছে নবান্নেও।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৪:০০
Share:

চা-শ্রমিকদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করে তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে জাল ছড়াতে সক্রিয় হয়েছে মাওবাদীরাএমনই দাবি পুলিশের। মালবাজারের সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা হত্যার তদন্তে নেমে ওই ব্যাপারে কিছু সূত্র পেয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, রাজেশ-খুনের পরে বাগানের কয়েকজন শ্রমিককে ‘লড়াকু অভিনন্দন’-এর বার্তা দিয়েছে মাওবাদীরা। তাদের এই তৎপরতার খবর পৌঁছেছে নবান্নেও। সরকারি তরফে চা শ্রমিকদের মজুরি (বর্ধিত) সংক্রান্ত চুক্তি দ্রুত রূপায়ণের ব্যাপারে শ্রম দফতরকে তৎপর হতে বলা হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “প্রাথমিক ভাবে চা বাগানে মাওবাদীদের তৎপরতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য মিলেছে। শ্রমিকদের ক্ষোভ উস্কে দেওয়ার পথেই ওরা হাঁটতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, পুজোর মরসুমে পর্যটক সেজে মাওবাদীদের একটি দল ডুয়ার্সের কয়েকটি চা-বাগান এলাকায় ঘোরাফেরা করেছে।”

সরকারি সূত্রের খবর, সোনালি চা বাগানের শ্রমিকদের একাংশকে মাওবাদীরা অভিনন্দন জানিয়েছে বলে গোয়েন্দারা খবর পাওয়ায় তরাই-ডুয়ার্সে মাওবাদীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে নতুন করে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “সোনালি বাগানের মালিককে খুনের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। বেশি কিছু বলা উচিত হবে না। তবে চা-বলয়ের যাবতীয় সমস্যার ব্যাপারে রাজ্য সরকার ওয়াকিবহাল। মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই উত্তরবঙ্গে আসছেন। এখানে কোনও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”

Advertisement

তরাই-ডুয়ার্সের চা-বলয়ে মাওবাদীদের আনাগোনা আগেও চোখে পড়েছে পুলিশের। মাস চারেক আগেই মালবাজারের কয়েকটি চা-বাগানে ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’ (পিএলজিএ)-র নাম করে বেশ কিছু হুমকি-পোস্টারও পড়েছে। সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা ওই পোস্টারের কোনওটিতে মালিককে বাগান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছিল। আবার কোনওটিতে মালিককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। মাস দু’য়েক আগে বাগরাকোটের সোনালি চা বাগান লাগোয়া এলাকায় মাওবাদীদের ‘দণ্ডকারণ্য কমিটি’র নাম করেও বেশ কিছু হুমকি-পোস্টার উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে ওই সব পোস্টার মাওবাদীদেরই দেওয়া বলে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও নবান্নের কাছেও সেই রিপোর্ট পৌঁছয়।

এরই মধ্যে শনিবার বিকেলে সোনালি বাগানের মালিককে খুনের তদন্তে নেমে ঘটনায় মাওবাদী-যোগ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। যাদের কাছে মাওবাদীদের বার্তা এসেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, চা-শ্রমিকদের নানা দাবিকে সামনে রেখে নিজেদের ‘সমব্যথী’ ভাবমূর্তি তৈরি করতে চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। সেই সূত্রে আগামী দিনে চা বলয়ে প্রভাব বাড়িয়ে, অশান্তি ছড়ানোর পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এলাকায় মাওবাদী-তৎপরতার কথা জানাজানি হতে রাজ্য সরকারকে শ্রমিক এবং চা বাগানের সমস্যা মেটানোয় সদর্থক ভূমিকায় দেখতে চাইছে একাধিক রাজনৈতিক দল। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পোর মন্তব্য, “শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি নিশ্চিত করতে দ্রুত মজুরি চুক্তি সই করাতে হবে রাজ্যকে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর রাশ আলগা হতে শুরু করলে, জঙ্গিরা ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে।” এলাকায় প্রভাবশালী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা জন বার্লাও বলেন, “মজুরি চুক্তি সই করানো নিয়ে সরকার এবং মালিক পক্ষ সদর্থক মনোভাব না নিলে জটিলতা বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন