কোরপান-হত্যা

মাথাদের পেতেই তুরুপের তাস জসিমুদ্দিন

বিভ্রান্তির পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে অপরাধীরা। এনআরএস ছাত্রাবাসে পিটিয়ে খুনের ঘটনার সেই চাঁইদের জালে ফেলতেই মেডিক্যাল কলেজটির প্রথম বর্ষের ছাত্র জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিল লালবাজার। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের এক সূত্রের দাবি: এনআরএস ছাত্রাবাসের ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত যারা, তারা নানা ভাবে জসিমুদ্দিনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল, যাতে তিনি আসল ঘটনা ফাঁস না-করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

বিভ্রান্তির পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে অপরাধীরা। এনআরএস ছাত্রাবাসে পিটিয়ে খুনের ঘটনার সেই চাঁইদের জালে ফেলতেই মেডিক্যাল কলেজটির প্রথম বর্ষের ছাত্র জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিল লালবাজার।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের এক সূত্রের দাবি: এনআরএস ছাত্রাবাসের ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত যারা, তারা নানা ভাবে জসিমুদ্দিনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল, যাতে তিনি আসল ঘটনা ফাঁস না-করেন। আর সে কারণেই ছেলেটি এক-এক বার এক-এক রকম তথ্য দিয়ে এক মাস যাবৎ তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করে গিয়েছেন। সূত্রটির আশা, এ বার জসিমুদ্দিন গ্রেফতার হওয়ায় চাঁইয়েরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। তাতে তদন্তে সুবিধা হবে।

লালবাজারের দাবি, এনআরএস-কাণ্ডে পুলিশ চার জনকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছে। জসিমুদ্দিনের মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করেই গত ১৬ নভেম্বর ভোরে উলুবেড়িয়ার মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক কোরপান শাহকে হস্টেলের চারতলায় থামের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। তাতে কোরপানের শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে গিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়, যাতে সে মারা যায়। পুলিশের বক্তব্য: মারধরে জসিমুদ্দিন সরাসরি যুক্ত না-থাকলেও ঘটনায় তাঁর কিছুটা ইন্ধন ছিল। বিশেষত মোবাইলটি খুঁজে পাওয়ার পরেও সে কেন গণপিটুনি থামানোর চেষ্টা করল না, জসিমুদ্দিন তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পুলিশকে দিতে পারেননি বলে তদন্তকারীদের দাবি।

Advertisement

বস্তুত ওঁর মোবাইল আদৌ চুরি গিয়েছিল কি না, সেই সন্দেহও গোয়েন্দাদের মনে দানা বাঁধছে। উপরন্তু হস্টেলের যে ‘দাদারা’ সে দিন কোরপানকে মেরেছিলেন, তাঁদের কাউকে তিনি চেনেন না বলে জসিমুদ্দিনের দেওয়া বয়ানও গোয়েন্দাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না। বরং তাঁরা নিশ্চিত, মালদহের চাঁচল থেকে আসা ছাত্রটি মাস দুয়েক এনআরএসের হস্টেলে থাকলেও খুনিদের প্রত্যেককেই চেনেন তিনি। পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় হস্টেলে ছিলেন, এমন কিছু নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেও জানা গিয়েছে, জসিমুদ্দিন পুরো ব্যাপারটা জানেন।

এমতাবস্থায় খুনি ‘দাদাদের’ কাছে পৌঁছতে তিনি-ই এখন লালবাজারের তুরুপের তাস। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, ওই দাদাদের অধিকাংশ তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি-পড়ুয়া, যাঁরা কিনা হস্টেলে জসিমুদ্দিনের আশপাশের ঘরগুলোর আবাসিক। এবং গত এক মাসে জসিমুদ্দিনের সঙ্গে কোন কোন ‘দাদা’র ঘন ঘন টেলিফোনে কথা হয়েছে, সেই তালিকা এখন পুলিশের হাতে। গণপিটুনির মাথাদের চিহ্নিত করতে সেটাও তদন্তকারীদের বড় অস্ত্র। প্রসঙ্গত, কোরপান-হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ পর্যন্ত নির্মাণকর্মী, ক্যান্টিন কর্মী-সহ মোট দেড়শো জনের বয়ান নথিভূক্ত করা হয়েছে। এঁদের বেশ ক’জন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা অভিযুক্তদের দেখলে চিনতে পারবেন। কিন্তু পুলিশের অভিযোগ, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ আবাসিকদের ছবি না-দেওয়ায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে অসুবিধে হচ্ছে। “এনআরএস-কর্তৃপক্ষ গোড়া থেকে তদন্তে সাহায্য করলে কোরপান-হত্যার পান্ডারা এত দিন আড়ালে থাকতে পারত না।” মন্তব্য এক গোয়েন্দা-অফিসারের।

এ দিকে এনআরএসের বিভিন্ন সিসিটিভি-তে গণপিটুনির আগের সাত দিনের ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা বলছেন, ঘটনার আগে কোন দিনও কোরপানকে এনআরএস চত্বরে দেখা যায়নি। লালবাজার-সূত্রের খবর: নির্মাণ শ্রমিকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সেই দিন কোরপান হস্টেলের চারতলার ৯২ ও ৯৪ নম্বর ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি মেরেছিলেন। তা দেখেই আবাসিকদের সন্দেহ হয়। জসিমুদ্দিন থাকেন ৯২ নম্বরে।

চাঁচলের দরিয়াপুর হাইস্কুলের ছাত্র জসিমুদ্দিন মাধ্যমিক পাশ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সূর্যপুরের আল আমিন মিশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৩-র জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেধা-তালিকায় তিনি ছিলেন ২৬৭ নম্বরে। তাঁর বাড়ির লোক এ দিন কলকাতায় এসেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন