মার্কিন মহড়ায় ঘুম নেই বিমানের

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে! গঙ্গার ধারে বালির পুরভোট ভেসে যায়, যাক! কিন্তু ভারত মহাসাগরের জলে যুদ্ধবিমানের ছায়া পড়তে দেখলে গর্জে উঠতে হবে! দক্ষিণ চিন সাগরের ধারেপাশে মার্কিন রণতরী দেখলেও ঘরে বসে থাকা চলবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে!

Advertisement

গঙ্গার ধারে বালির পুরভোট ভেসে যায়, যাক! কিন্তু ভারত মহাসাগরের জলে যুদ্ধবিমানের ছায়া পড়তে দেখলে গর্জে উঠতে হবে! দক্ষিণ চিন সাগরের ধারেপাশে মার্কিন রণতরী দেখলেও ঘরে বসে থাকা চলবে না। পুজোর যানজট, কেনাকাটার বাজার, পথভর্তি মানুষের বিরক্তি উৎপাদন— এ সব নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। সাগরের জলে বিমানের প্রতিবিম্ব দেখে কলকাতার রাজপথে মিছিলের ঢেউ তুলবেন বিমান বসু!

হাভানায় বৃষ্টি হলে গড়ের মাঠে কমরেডরা নাকি ছাতা খুলে দাঁড়ান! বহু দশক আগে থেকে চালু এই রসিকতার মেয়াদ যে আজও ফুরোয়নি, পুজোর কলকাতায় ফের প্রমাণ দিতে চলেছেন বিমানবাবুরা! আমেরিকা ও ভারতের কৌশলগত মিত্রতার জেরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে কাল, শুক্রবার কলকাতায় মিছিল করবে বামেরা। শুধু আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্ণধারেরাই নন, ঘর উজাড় হয়ে যাওয়ার সময়ে বনের মোষ তাড়ানোর সামিল এই কর্মসূচির দোসর এসইউসি এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো বৃহত্তর বামবিধাননগরে শাসক দলের বাহিনীর দাপটে যখন মানুষ ভোট দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরছেন, সাংবাদিকেরা পর্যন্ত আক্রান্ত বা বালিতে তৃণমূলের ঝটিকা ভোটের মুখে দুয়ারে খিল এঁটে বসেছেন সিপিএম কর্মীরা, তখন এসইউসি বা লিবারেশন গিয়ে যুদ্ধে বল জোগায়নি। কিন্তু বৃহত্তর বাম সঙ্গীদের কি ফেলে দেওয়া যায়? তাই তাদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা কাঁপানোর কর্মসূচি নিতে গিয়ে নিজেদের লক্ষ্মণরেখা ভেঙে ফেলতেও পিছপা হচ্ছেন না বিমানবাবুরা। বামফ্রন্টের তরফে ঘোষণা হয়েছিল, উৎসবের মরসুমে ১২ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বাইরে কর্মসূচি থাকবে না। তবে বড় কোনও ঘটনা ঘটলে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে। বিমানবাবুরা এখন এই সাম্রাজ্যবাদের ভূতকেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার যোগ্য বলে ঠাউরেছেন! বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, এই সময় কর্মসূচি নেব না। আবার এটাও বলেছিলাম, জরুরি কিছু হলে আমাদের পথে নামতে হতে পারে। সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার আক্রমণ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে ঘরে বসে থাকলে চলবে না।’’ একই সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘উৎসবের মরসুম থাকায় ১৬ তারিখের মিছিলে অনেকের অসুবিধা হবে। দেখব যতটা কম অসুবিধা করে মিছিল করা যায়।’’

Advertisement

ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে জমায়েত হয়ে কাল বিকেলে মিছিল যাবে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত। সব বাম দল ও সংগঠনকেই মিছিলে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিমানবাবু। আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবার রাতেই এসইউসি ও লিবারেশন-সহ বাম নেতৃত্বের সঙ্গে বসে কর্মসূচি ছকে ফেলেছিলেন বিমানবাবুরা। তবে পুরভোটে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে শুধু সাম্রাজ্যবাদকে গাল পাড়তে রাস্তায় নামলে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বুঝেই সম্ভবত প্রস্তাব এসেছিল, দাদরি-কাণ্ড এবং তার পরে ঘটে চলা একের পর এক ঘটনার প্রতিবাদকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা হোক।

সেই মতোই এ দিন বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘ভারতের রাজনীতিতে যে ভাবে সাম্প্রদায়িকরণ চলছে এবং সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারে ভারতের সঙ্গে তাদের জোট ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা ভয়ঙ্কর!’’ মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহ়ড়া এ দিন থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত চলবে— জানিয়ে দিয়েছেন বিমানবাবু।

এই কর্মসূচির দু’শো মাইলের মধ্যেও ঢুকছেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! সিপিএমের মধ্যে বড় একটি অংশেরও এমন কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘এই সব কর্মসূচি দিয়ে আজকের দিনে লোক টানা যায়? এই ধরনের ভাবনা থেকে বেরোতে না পারলে সামনে গভীর সঙ্কট!’’ দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা উপলক্ষ। আসল কথা হল মাসখানেকের বিরতিতে যাওয়ার আগে সংগঠনকে রাস্তায় নামিয়ে ঝালিয়ে নেওয়া।’’ কিন্তু তাঁদের আসল লড়াই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে! বারাক ওবামার ছায়ার বিরুদ্ধে কুচকাওয়াজ করে লাভ কী? ওই নেতা বলছেন, ‘‘কে বলল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলব না? দাদরি-সহ এত ঘটনায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কোনও প্রতিবাদ কেউ শুনেছে? দিদি আর মোদী তো একই মুদ্রার দুই পিঠ! মুখ্যমন্ত্রীর নীরবতার জবাবদিহিও চাইব।’’

ঘটনাচক্রে, আলিমুদ্দিনে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ছিল। জেলা থেকে এখনও সদ্যসমাপ্ত পুরভোটের বিশদ রিপোর্ট আসেনি। কিন্তু আসানসোলে কিছুটা প্রতিরোধ ছা়ড়া বিধাননগর বা বালিতে শাসকের তাণ্ডবের মুখে যে দাগ কাটতে পারা যায়নি, সেই উদ্বেগ উঠে এসেছে রাজ্য নেতৃত্বের প্রাথমিক আলোচনায়। কিন্তু মনে যতই উদ্বেগ থাক, গলা দিয়ে আপাতত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্লোগানই কাঁপিয়ে দেবে পুজোর আকাশ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement