রাতভর হাসি আর কান্নায় কলরবের উদযাপন

চার মাস আগেকার সেই রাতে পুলিশের কিল-চড় আর বুটের ঘা থেকে অন্ধকার যন্ত্রণায় জন্ম নিয়েছিল এক আন্দোলন।সোমবার রাতভর হুল্লোড়ে সেই আন্দোলনের সাফল্য উদযাপন।তার আগে বিকেল থেকে চলল নাটকের রুদ্ধশ্বাস অন্তিম অঙ্ক।ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পেরিয়ে পৌনে ৭টার দিকে যাচ্ছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য জানাচ্ছেন। কী হয়, তা জানার উৎকণ্ঠার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘নিরাপত্তা’ দেওয়ার তাগিদে প্রচুর পড়ুয়া দাঁড়িয়েছেন মানবশৃঙ্খলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

অরবিন্দ ভবনের সামনে উচ্ছ্বাস পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

চার মাস আগেকার সেই রাতে পুলিশের কিল-চড় আর বুটের ঘা থেকে অন্ধকার যন্ত্রণায় জন্ম নিয়েছিল এক আন্দোলন।

Advertisement

সোমবার রাতভর হুল্লোড়ে সেই আন্দোলনের সাফল্য উদযাপন।

তার আগে বিকেল থেকে চলল নাটকের রুদ্ধশ্বাস অন্তিম অঙ্ক।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পেরিয়ে পৌনে ৭টার দিকে যাচ্ছে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য জানাচ্ছেন। কী হয়, তা জানার উৎকণ্ঠার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘নিরাপত্তা’ দেওয়ার তাগিদে প্রচুর পড়ুয়া দাঁড়িয়েছেন মানবশৃঙ্খলে।

হঠাৎ প্রবল উল্লাসধ্বনি। অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ঠিকঠাক শুনতে পাননি। তাঁরা আন্দাজেই দু’হাত তুলে শুরু করে দিলেন উল্লাস। ভেঙে গেল ব্যারিকেড। চতুর্দিকে কলরব ‘হোক হোক হোক কলরব।’ শেষ পর্যন্ত তাঁদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করছেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী।

যে অরবিন্দ ভবনের সামনে ঘেরাও চলাকালীন পুলিশের মার খেয়ে কাউকে কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, সেখানেই খবর এল, ইস্তফা দিচ্ছেন অভিজিৎবাবু। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর মোবাইলে আসা উপাচার্যের ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করা এসএমএস পর্যন্ত পড়ে শুনিয়েছেন তত ক্ষণে। শুরু হল আন্দোলনকারীদের পরস্পরকে আলিঙ্গনের পালা। আনন্দে কেঁদে ফেললেন অনেকে। এ দিনই ছেলেমেয়েদের সমর্থনে প্রতীকী অনশন করেন কিছু অভিভাবক। বাবা-মায়েদের জড়িয়ে ধরে কেউ কাঁদলেন। কেউ কেউ হেসেই লুটোপুটি। এল মিষ্টি। লাল আবির। শুরু হল খেলা।


উল্লাস। উপাচার্য সরে যাচ্ছেন, খবর আসার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

এর মধ্যে ফলের রস, মিষ্টি খেয়ে ১৬৪ ঘণ্টার অনশন ভাঙলেন পড়ুয়ারা। অনেককেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য। ক্যাম্পাস জুড়ে তখন ছোটাছুটি। অনেকে জয়ের আনন্দ এঁকে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে। যেখানে এত দিন উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে স্লোগান লিখেছেন, সেখানেই জয়ের বার্তা ফোটালেন তাঁরা। অরবিন্দ ভবনের পিছনের মাঠে জড়ো হলেন আন্দোলনকারীরা। অনশনকারীরা ভেসে গেলেন অভিনন্দনে। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে বিজয় মিছিল ঘুরে এল যাদবপুর থানা। ছাত্রছাত্রীরা জানান, শনিবার ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের চার মাস পূর্ণ হবে। ওই দিন মহামিছিল হবে রবীন্দ্র সদন থেকে। আজ, মঙ্গলবার ক্যাম্পাস থেকে গড়িয়াহাট মিছিল হওয়ার কথা।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আচার্যের কাছ থেকে শংসাপত্র নেননি গীতশ্রী সরকার। তাঁর মন্তব্য, “দাবিতে অনড় ছিলাম। মৈত্রীও অটুট ছিল। এটা আমাদের লড়াইয়ের জয়।”

ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই আন্দোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন জুটা। সংগঠনের সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য বলেন, “ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক-সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এতে প্রমাণিত হল, আমাদের দাবি ঠিক ছিল। তাই বিলম্ব হলেও প্রশাসন পদক্ষেপ করায় আমরা খুশি।” রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ পরে বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা অনশন তুলে নেওয়ায় আমি খুশি।”

শিক্ষামন্ত্রী রবিবারেই বলেছিলেন তিনি অনশনকারীদের কাছে যাবেন। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ যাদবপুরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অন্য কাজে আটকে পড়ায় নির্দিষ্ট সময়ে যেতে পারেনি। উত্তেজিত হয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অনেকে বাইরে বেরিয়ে পথ অবরোধ করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা উঠে যায়। পার্থবাবু এলেন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা নাগাদ।

তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই উপরি পাওনা খোদ মুখ্যমন্ত্রী। যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যখন ঢুকলেন, আন্দোলনকারীরা বুঝে যান, কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তাঁদের আশা পূরণও হল আধ ঘণ্টার মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন