বোলপুরের জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
সারদা মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি যখন প্রায় ঘাড়ের উপরে চলে এসেছে, সেই সময় তাকে ভোট প্রচারে তুলে আনলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
এ দিন বীরভূমের দুবরাজপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি অভিযোগ করেন, “সারদা কেলেঙ্কারিতে সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে।” সেই টাকা কোথায় গিয়েছে, সে সম্পর্কে সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “কোন পয়সায় আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে? সব সাধারণ মানুষের লুঠ হওয়া টাকা।” রাজ্যে ভোট প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর নাম এ দিন উচ্চারণ করেননি সূর্যবাবু। তিনি বলেন, “এই যে হেলিকপ্টার উড়ছে, কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ হচ্ছে, এ সব কার টাকা? আপনারা বুঝতে পারছেন না? সব লুঠ হওয়া টাকা।” তাঁর বক্তব্য, “এখন ভোটের সময় ওরা আপনাদের লুঠ হওয়া টাকার কিছু অংশ দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে তার বহু গুণ লুঠ করবে।”
সারদা গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে তৃণমূল নেতারা লাভবান হয়েছেন বলে ওই দলেরই সাংসদ কুণাল ঘোষ তোপ দেগেছেন। তিনি গোপন জবানবন্দিও দিতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানিয়েছেন। সারদা-কাণ্ডকে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলে সুপ্রিম কোর্টও সম্প্রতি উল্লেখ করেছে। আগামী বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে ওই মামলায় কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় দল। দলের একাংশ এই নিয়ে আলোচনাও করছেন। কারণ, ওই দিন সারদায় কারা লাভবান হয়েছেন, তাঁদের নাম লেখা বন্ধ খামটি খোলা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সূর্যবাবুর টিপ্পনি তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “কিছু বলব না। এই ধরনের মন্তব্য যাঁরা করছেন তাঁরা বাংলার বুকে তামাদি হয়ে গিয়েছেন।” দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী নন। তাঁর কথায়, “সূর্যবাবুর কথা যত শুনছি, ততই বুঝতে পারছি, ওঁরা রাজনৈতিক জমি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন। এখন বিষয় না পেয়ে কুৎসা-অপপ্রচারের পথে হাঁটছেন ওঁরা।”
এ দিন দুবারাজপুরে সূর্যবাবু ওই সভায় অভিযোগ করেন, “সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট জিজ্ঞাসা করেছে, আমানতকারীদের টাকা গেল কোথায়? সরকার উত্তর দিতে পারছে না। সরকার প্রথমে হিসেব দিয়েছিল সতেরোশো কোটি টাকার। পরে বলেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। আমি মনে করি তার পাশে আরও একটা শূন্য বসবে।” তাঁর দাবি, “গরিব মানুষের লুঠ হওয়া টাকা। যাঁদের টাকা লুঠ হয়েছে, সেই সব আমানতকারীর তা ফেরত দিতে হবে।”
বিরোধী নেতার এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পার্থবাবু পরে বলেন, “প্যান কার্ড ছাড়া সিপিএম নেতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা হয়েছে কী ভাবে, এই রহস্য সূর্যবাবু আগে ভেদ করুন!” তিনি আরও বলেন, “সিপিএম এখন জনশক্তিহীন একটা দল। সূর্যবাবুরা যে কুৎসা ও মিথ্যা প্রচার করছেন, বাংলার মানুষ তার উপযুক্ত জবাব দেবেন।”