লৌহকপাটের আড়ালে বসেই সাফল্যের স্বাদ

জেলের মধ্যে মানসিক রোগে ভুগছিলেন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের বন্দি দয়াময় নন্দী। বছর চল্লিশের ওই বন্দিকে সুস্থ করার জন্য জেলেই চিকিৎসা শুরু হয়। সুস্থ হওয়ার পরে সেখানেই থেমে থাকেননি জেলের কর্মীরা। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন তাঁকে। তারই ফল মিলেছে এ বারের মাধ্যমিকে। সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন দয়াময়। পেয়েছেন ৩৬২।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

জেলের মধ্যে মানসিক রোগে ভুগছিলেন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের বন্দি দয়াময় নন্দী। বছর চল্লিশের ওই বন্দিকে সুস্থ করার জন্য জেলেই চিকিৎসা শুরু হয়। সুস্থ হওয়ার পরে সেখানেই থেমে থাকেননি জেলের কর্মীরা। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন তাঁকে। তারই ফল মিলেছে এ বারের মাধ্যমিকে। সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন দয়াময়। পেয়েছেন ৩৬২।

Advertisement

দিল্লি থেকে মাদক চোরাচালান মামলায় ধরা পড়ে বছর ছয়েক আগে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে আসেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান শেন ডাওসন। পেশায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ডাওসনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সব কিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। জেলে বসে ফের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এ বার ৩১০ পেয়ে মাধমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনিও।

২০১১ সালে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জেলে এসেছিলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দা প্রতিমা নস্কর। খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় প্রতিমার। জেলের মধ্যে প্রতিমার মেয়ে হয়। তাতেও পড়াশোনায় ছেদ পড়েনি। এ বছর মাধ্যমিক পাশ করেছেন প্রতিমা। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২৯৫।

Advertisement

দয়াময়, ডাওসন বা প্রতিমাদের মতো এ বছর ৫৮ জন বন্দি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাশ করেছেন ৫২ জন। তাঁদের মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা। ৪৩ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এবং ন’জন বিচারাধীন। তবে বন্দিদের নিরিখে সাফল্যের হার মহিলাদের মধ্যেই বেশি ভাল। সাত মহিলা বন্দি এ বার মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। সাত জনই পাশ করেছেন। পুরুষ বন্দিদের ৫১ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাশ করেছেন ৪৫ জন। বৃহস্পতিবার এ কথা জানান এডিজি (কারা) অধীর শর্মা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলে সাফল্যে হার একশো শতাংশ। কারা দফতর সূত্রের খবর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুর মহিলা জেলে এ বছর মাধ্যমিক দেন যথাক্রমে আট, দশ এবং ছ’জন। সকলেই পাশ।

বন্দিদের মধ্যে এ বার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেলের বন্দি বৈদ্য দাস। শিলিগুড়ির বাসিন্দা বৈদ্য ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত। জেলে আছেন বছর পাঁচেক। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৮। মহিলাদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন সিউড়ি জেলের বন্দি দুর্গা সূত্রধর। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৩০৫। এ বার যে-৫২ জন বন্দি পাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন পাঁচ জন। ২২ জন করে ‘বি প্লাস’ এবং ‘বি’ গ্রেড পেয়েছেন। তিন জন ‘সি’ গ্রেড।

এডিজি শর্মা বন্দিদের এই সাফল্যে খুশি। তিনি বলেন, “আমরা সব সময়েই বন্দিদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিই। যাঁরা মাধ্যমিক পাশ করলেন, তাঁরা যাতে আরও পড়াশোনা করেন, সেই জন্যও আমরা উৎসাহ দেব। এমনকী তাঁদের যাতে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের উপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, সেই বিষয়েও আমরা ভাবনাচিন্তা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন