মঞ্জুষা সিংহ মহাপাত্র
আশ্বাস দিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলালেন না ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া কলেজের পদত্যাগী টিচার-ইনচার্জ মঞ্জুষা সিংহ মহাপাত্র।
শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চাপেই মঞ্জুষাদেবী ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে কলেজ সূত্রের দাবি। খবর জেনে সোমবার সকালে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঞ্জুষাদেবীকে ফোন করে ঘটনার কথা জানতে চান। তাঁকে টিচার-ইনচার্জ পদে কাজ চালিয়ে যেতেও বলেন। মঞ্জুষাদেবী অবশ্য রাজি হননি।
মন্ত্রীর আশ্বাসেও ভরসা পাচ্ছেন না কেন? জবাব এড়িয়ে মঞ্জুষাদেবী বলেন, “সবিনয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, টিচার-ইনচার্জের পদে থাকতে চাই না। আমি নতুন টিচার-ইনচার্জকে সব রকম সহযোগিতা করব।”
শিক্ষামন্ত্রী শুধু মঞ্জুষাদেবীকে নয়, এই ঘটনায় যাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার সঙ্গেও কথা বলেছেন। পার্থবাবু বলেন, “এত সহজে বিষয়টা ছাড়ব না। শঙ্কুদেবকে বলেছি, মঞ্জুষাদেবীর পদত্যাগের জন্য যদি ছাত্র সংগঠনের কেউ জড়িত থাকে, তা হলে তাকে রাখা যাবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের কাছেও ঘটনার বিশদ রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মঞ্জুষাদেবীর পদত্যাগপত্র কলেজের পরিচালন সমিতি গ্রহণ করাতেও চটেছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে।”
মন্তব্য করতে চাননি শঙ্কুদেব। তিনি জানান, আজ, মঙ্গলবার লালগড়ে যাবেন। মানিকপাড়া কলেজের ঘটনা নিয়ে কিছু বলার হলে, সেখানেই বলবেন। ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ মঞ্জুষাদেবীর পদত্যাগপত্র ১৩ অগস্ট গৃহীত হয়। তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সদস্য মঞ্জুষাদেবী পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দেওয়ার কথা লিখলেও, কলেজ এবং স্থানীয় সূত্রের দাবি, টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সঙ্গে বিরোধের জেরেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হন তিনি। ওই শিক্ষিকা ইস্তফা দেওয়ার কারণ না ভেঙে বলেছিলেন, “পরিস্থিতির চাপ সহ্য করতে পারলাম না।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিচালন সমিতির সভাপতি হরিপদ বেরা বাম-আমলের মনোনীত লোক। ঝাড়গ্রামের কাপগাড়ি সেবাভারতী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক হরিপদবাবু প্রায় আট বছর মানিকপাড়া কলেজের সভাপতি পদে রয়েছেন। তাই তাঁকে সরাতে তৎপর হয়েছে শাসক দলের বিভিন্ন গোষ্ঠী। কিন্তু পরিচালন সমিতির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, তা তারা ঠিক করে উঠতে পারেনি। সেই পরিস্থিতিতে সভাপতি বদলের পক্ষে ছিলেন না মঞ্জুষাদেবী। কিছু দিন আগে পরিচালন সমিতির বৈঠক চলাকালীন হরিপদবাবু ও মঞ্জুষাদেবীর পদত্যাগের দাবিতে টিএমসিপি কলেজে বিক্ষোভ দেখায়। চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া এবং সম্প্রতি সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ঘিরে টিএমসিপি-র সঙ্গে মঞ্জুষাদেবীর সংঘাতের মাত্রা বাড়ে। এর ফলেই টিচার ইন-চার্জের পদ থেকে মঞ্জুষাদেবী ইস্তফা দিয়েছেন বলে মনে করছেন ওয়াকিবহালেরা।
ওই ইস্তফা-কাণ্ডের জেরে শিক্ষামন্ত্রী পরিচালন সমিতি আমূল পাল্টে ফেলতে চান জেনে হরিপদবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কলেজের স্বার্থে সেটা যদি ভাল হয়, তা হলে তা-ই হোক।”