আদালতের নির্দেশের পরেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রায় দু’দিন ধরে গড়িমসি করেছে পুলিশ। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি থেকে তাঁকে সাময়িক রেহাই দিল আদালত।
মঙ্গলবার শিবাজিকে গ্রেফতারের জন্য কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দেন ব্যারাকপুরের চতুর্থ বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজর্ষি মুখোপাধ্যায়। বুধবার সারা দিনেও কেন সেই নির্দেশ পালন করা যায়নি, প্রশ্ন উঠেছিল। আর বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুরের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় গ্রেফতারের নির্দেশ স্থগিত করে দিয়েছেন। ১৮ মার্চ ফের শুনানি হওয়ার কথা। শিবাজিকে গ্রেফতারের নির্দেশ বহাল থাকবে কি না, সে-দিনই তা স্পষ্ট হবে বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন।
পুলিশি সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে ঢাকা থেকে ফেরার সময় কলকাতা বিমানবন্দরে আটক করা হয় শিবাজিকে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি জালিয়াতির মামলায় ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করেছিল দিল্লি পুলিশ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক (এনএসসিবিআই) বিমানবন্দর থানা শিবাজিকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলে। তিনি জামিন পেয়ে যান। কিন্তু শর্ত ছিল, ১০ মার্চের মধ্যে দিল্লির আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সেই নির্দেশ না-মানায় শিবাজির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
দিল্লি পুলিশের খবর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফিনান্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইএফসিআই)-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জীবন সিংহ ২১ জুলাই কালকাজি দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেন, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আইএফসিআই থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নেন শিবাজি। কিন্তু সময়মতো ঋণ শোধ না-করায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তকারীদের দাবি, শিবাজি ঋণ নেওয়ার সময় জাল নথি দিয়েছিলেন বলে তদন্তে ধরা পড়েছে। তাই দিল্লি পুলিশ শিবাজির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, নথি জাল, নথি জাল করে প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৮ এবং ৪৭১, ১২০বি ধারায় জামিন-অযোগ্য মামলা দায়ের করে। পুলিশের অভিযোগ, বারবার যোগাযোগ করা হলেও শিবাজির নাগাল মেলেনি। বাধ্য হয়ে তাঁর নামে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়।
শিবাজির আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা ও রাজদীপ মজুমদার এ দিন আদালতে জানান, শিবাজির চোখে সংক্রমণ হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতারের আগে ওই ঘটনায় তিনি জড়িত কি না, তা প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হোক। তার জন্য গ্রেফতারের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ চান তাঁরা।
এ দিন দিল্লি পুলিশের কোনও আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন না। সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি দত্ত এই স্থগিতাদেশের আবেদনের বিরোধিতা করেন। কিন্তু সরকারি আইনজীবীর আর্জি খারিজ করে বিচারক জানান, শিবাজিকে আপাতত গ্রেফতার করা হবে না। ১৮ মার্চ সব কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে হবে শিবাজির আইনজীবীদের।