সুনিয়ায় রেজ্জাকের মঞ্চ, নির্বিকার লক্ষ্মণরা

জেলার বাইরে থেকে সিপিএমের বিক্ষুব্ধ বর্তমানে বহিষ্কৃত নেতাদের একটি দল কাঁথির সুনিয়ায় গিয়ে দেখা করলেন আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে। বার্তা দিলেন পাশে থাকার। তখনও পর্যন্ত জেলা সিপিএমের বিক্ষুব্ধ লক্ষ্মণ শিবির কিংবা তাঁর ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চে’-র তরফে দেখা গেল না কোনও সক্রিয় ভূমিকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

সুনিয়ায় মৃতার বাড়ির সামনে গণমঞ্চের প্রতিনিধিরা।—নিজস্ব চিত্র।

জেলার বাইরে থেকে সিপিএমের বিক্ষুব্ধ বর্তমানে বহিষ্কৃত নেতাদের একটি দল কাঁথির সুনিয়ায় গিয়ে দেখা করলেন আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে। বার্তা দিলেন পাশে থাকার। তখনও পর্যন্ত জেলা সিপিএমের বিক্ষুব্ধ লক্ষ্মণ শিবির কিংবা তাঁর ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চে’-র তরফে দেখা গেল না কোনও সক্রিয় ভূমিকা।

Advertisement

এক সময় গোটা পূর্ব মেদিনীপুরই ছিল লক্ষ্মণ শেঠের খাসতালুক। সেই জেলারই সুনিয়ায় ঘরছাড়া সিপিএম নেতার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলের নেত্রীর উপরে এমন নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদে আগেই পথে নেমেছে সিপিএম। বিক্ষোভ কিংবা বিবৃতিতে পিছিয়ে নেই বিজেপি কিংবা কংগ্রেসও। বৃহস্পতিবারই বিক্ষুব্ধ, অধুনা বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার ‘গণমঞ্চ’ সুনিয়ায় ওই ঘটনায় তৃণমূল এবং পুলিশর ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছে। কিন্তু, রাজনৈতিক ভাবে কোনও রকম কর্মসূচি তো দূর, এখনও পর্যন্ত একটি বিবৃতিও আসেনি আর এক বিক্ষুব্ধ তথা বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের ‘ভারত নির্মাণ মঞ্চ’ হতে। গণমঞ্চের তরফে প্রসেনজিত্‌ বসুর বক্তব্য, “আমরা গোড়া থেকেই বলেছি, যেখানেই মানুষ আক্রান্ত হবেন, গণতান্ত্রিক অধিকার লুঠ করা হবে, সেখানেই আমরা যাব। সুনিয়ায় গিয়ে পুলিশের ন্যক্কারজনক ভূমিকা দেখে এলাম। এরপরে যদি ওখানে যেতে হয়, লোকজন নিয়ে গণ-প্রতিবাদ করতে যাব।”

‘ভারত নির্মাণ মঞ্চে’র তরফে এমন আশ্চর্য নীরবতা কেন? এই প্রশ্নই উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। ভারত নির্মাণ মঞ্চের সভাপতি লক্ষ্মণ শেঠ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে মঞ্চের সহ-সভাপতি প্রশান্ত পাত্র বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা সুনিয়ায় যাইনি ঠিকই। তবে ওই ঘটনার খোঁজখবর রাখছি। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি।” ওই কথা শুনে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির কটাক্ষ, “যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন, তাঁদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত। মুখ্যমন্ত্রীর বিষ নজরে পড়ার ভয়েই হয়ত তাঁরা চুপ করে রয়েছেন।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ প্রসেনজিত্‌ বসু, শুভনীল চৌধুরীদের নেতৃত্বে গণমঞ্চের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল সুনিয়া যান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা কাঁথি থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। গণমঞ্চের তরফে প্রসেনজিতের অভিযোগ, ঘটনার চার দিন পরেও মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবাশিস ভঁুইয়া-সহ বাকিদের গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি বলেন, “তৃণমূল জড়িত বলেই পুলিশ নিষ্ক্রিয়। সে দিন খবর পেয়েও পুলিশ তা ঠেকানোর চেষ্টাই করেনি। কাঁথি থানার আইসি-র আমরা অবিলম্বে শাস্তি দাবি করছি।” সুনিয়ায় গিয়ে ঘটনার যে বিবরণ এ দিন তাঁরা জেনেছেন, তা চিঠি দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে জানাবেন বলেও মন্তব্য করেছেন প্রসেনজিত্‌।

এ দিন বিকেলে কাঁথির ‘দেশপ্রাণ প্রতিবাদী সমাজ’-এর পক্ষ থেকে সুনিয়া-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরের নেতাজী মূর্তির সামনে থেকে মৌন মিছিল বের হয়। নেতৃত্ব ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক অনিল মান্না, প্রভাকর চৌধুরী, কণিষ্ক পন্ডা প্রমুখ। এ দিকে বুধবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ-সভার পর, এ দিন বিকেলে কাঁথি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে জেলা বামফ্রন্টের তরফে প্রতিবাদ সভা হয়। সেখানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব ফের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, ময়নাতদন্তে কারচুপির অভিযোগ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন