সাংবাদিকরা ভিড় করতেই বদলে গেল খুশির হাওয়া

ছোটবেলা থেকেই বড্ড জেদি মেয়েটা। জেদই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল পৃথিবীর শীর্ষে। কাঞ্চনজঙ্ঘার মূল শৃঙ্গ থেকে নেমে আসার পর সেই জেদই টেনে নিয়ে গিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার পশ্চিম শৃঙ্গের (ইয়ালুং কাং) দিকে। তিনি ছন্দা গায়েন। গত বছর ১৮ মে এভারেস্টে উঠে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। আর এ বছর ওই একই তারিখে উঠে পড়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মূল শৃঙ্গে। শৃঙ্গ জয় করার দুর্দম নেশা ছন্দার। এভারেস্ট জিতেও সে বার থেমে থাকেননি।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০২:৩৯
Share:

ছন্দা গায়েনের মায়ের সঙ্গে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

ছোটবেলা থেকেই বড্ড জেদি মেয়েটা। জেদই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল পৃথিবীর শীর্ষে। কাঞ্চনজঙ্ঘার মূল শৃঙ্গ থেকে নেমে আসার পর সেই জেদই টেনে নিয়ে গিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার পশ্চিম শৃঙ্গের (ইয়ালুং কাং) দিকে।

Advertisement

তিনি ছন্দা গায়েন। গত বছর ১৮ মে এভারেস্টে উঠে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। আর এ বছর ওই একই তারিখে উঠে পড়েছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘার মূল শৃঙ্গে। শৃঙ্গ জয় করার দুর্দম নেশা ছন্দার। এভারেস্ট জিতেও সে বার থেমে থাকেননি। ফেরার পথে জয় করেছিলেন লোত্‌সে। এ বারও সে রকমই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সামিটে পা রাখার পথেই তুষারধসে নিখোঁজ হয়ে গেলেন তিনি।

খবরটা এ দিন বেলা দু’টো পর্যন্ত জানতেই পারেননি ছন্দার মা জয়া গায়েন। জানলেন বাড়িতে সাংবাদিকদের ভিড় জমার পর। মেয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ের পর থেকে বাড়িতে যে আনন্দের হাওয়া বইছিল, তা যেন থমকে গেল এক নিমেষে।

Advertisement

কাঞ্চনজঙ্ঘায় উঠবেন, বহু দিন ধরেই স্বপ্নটা সযত্নে লালিত ছিল ছন্দার মনে। এভারেস্ট জয়ের পর এবিপি-আনন্দে সেরা বাঙালির পুরস্কার নিতে এসে বলেছিলেন, “এভারেস্টের থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান অনেক বেশি কঠিন। এক বার কাঞ্চনজঙ্ঘা ওঠা তিন বার এভারেস্টে ওঠার সমান।” কিন্তু দুর্গম অভিযানের জন্য টাকা জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছিল। সে কথা দেখানোও হয়েছিল এবিপি-আনন্দে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এবিপি-আনন্দে ছন্দা বলেছিলেন, “বারো বছর আগে একটি জাপানি দল কাঞ্চনজঙ্ঘায় গিয়েছিল। তার পর আমি। কিন্তু স্পনসর মিলছে না।” এই খবর দেখে অনেকে এগিয়ে এসেছিলেন। পরে এ জন্য ছন্দা ধন্যবাদও জানান এবিপি আনন্দকে।

মঙ্গলবারই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছিল কোনা বাগপাড়ায়। কিন্তু সেই পরিবেশ যে এক দিনের মধ্যে এ ভাবে বদলে যাবে, তা কেউই ভাবতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর পাওয়ার পরেই ছন্দার দাদা জ্যোতির্ময় ফোনে ধরেন ছন্দার অভিযানের ব্যবস্থাপক সংস্থাকে। লাইন মেলেনি। পরের ফোন যায় আর এক এভারেস্ট জয়ী বসন্ত সিংহরায় ও ছন্দার অন্য বন্ধুদের কাছে। কিন্তু কারও কাছ থেকেই নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ফোন আসে ব্যবস্থাপক সংস্থার প্রধান মিংমা শেরপার কাছ থেকে। তিনি-ই প্রথম বলেন, “নেপাল সরকারের কপ্টার খোঁজ করতে গিয়েছিল। আবহাওয়া খারাপ থাকায় পারেনি। বৃহস্পতিবার ফের খোঁজ শুরু হবে।”

এত ক্ষণ উত্‌কণ্ঠা ছিল। এ বার হঠাত্‌ থম মেরে গেলেন জয়াদেবী। চোখ দিয়ে নামল জলের ধারা। বললেন, “জানি না মেয়েটাকে ফিরে পাব কি না!” কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছন্দার বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডল জানালেন, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় আসছেন। শুধু মন্ত্রীরা নন, দলে দলে এ বার ছন্দার বাড়িতে হাজির হন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতি বার অভিযানের সময় ছন্দাকে সাহায্য করতেন পাড়াতুতো দাদা আশুতোষ পাটোয়ারি। তিনি এ দিন বলছিলেন, “স্পনসরের জন্য দোরে-দোরে হত্যে দিতে হয়েছিল। তবু হাল ছাড়েনি।”

ছন্দার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অভিযানে যাওয়া এক তরুণী বলছেন, “সব সময় নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকত।”

বিকেল পাঁচটা নাগাদ যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এলেন ছন্দার বাড়ি। তাঁর মোবাইল মারফত জয়াদেবীর সঙ্গে সরাসরি কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, “মুখ্যমন্ত্রী সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।” দিনভরই নবান্নে এ দিন ছন্দার খবর নিয়ে যথেষ্ট তত্‌পরতা ছিল। অরূপবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব নেপাল সরকার ও বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ছন্দার দলের বাকি সদস্য দীপঙ্কর ঘোষ, রাজীব ভট্টাচার্য ও টুসি দাসকে দ্রুত কলকাতায় ফেরানোর জন্য এভারেস্ট জয়ী উজ্জ্বল রায় ও দেবদাস নন্দীকে এ দিনই নেপালে রওনা করিয়েছে রাজ্য। সঙ্গে গিয়েছেন যুব কল্যাণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রশান্ত মণ্ডলও।

ছন্দার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্‌কণ্ঠা বাড়তে থাকে টুসি-সহ বাকি তিন জনের পরিবারের মধ্যেও। তবে টুসির সুস্থ থাকার খবর দুপুরে ফোনে দমদম পার্কের বাড়িতে জানিয়ে দেন টুসির স্বামী অনীশ শাহ। অভিযানের ব্যবস্থাপক মিংমা শেরপার কাছ থেকেই অনীশ এই খবর পেয়েছেন।

ছন্দারও খবর মিলবে, আশায় বুক বাঁধছেন সকলে। পাড়ার কিছু যুবককে মার্শাল আর্ট শেখাতেন ছন্দা। দুই ছাত্র সুব্রত সূত্রধর ও আনন্দ সাহা বললেন, “দিদির যা সাহস, ও ফিরবেই।”

(সহ-প্রতিবেদন: আর্যভট্ট খান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন