সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁচায় দিনের বাছাই মন্ত্রী মদন

সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় উঠে এসেছিল তাঁর উদ্ধৃতি। ‘গাঁধী, নেহরু, নেতাজি—সকলেই জেলে গিয়েছেন।’ বিকেল গড়াতে ফেসবুক বা হোয়াট্স অ্যাপ-এর বার্তা তাঁকেই নিশানা করল। টইটম্বুর রসবোধে বাঙালি লিখল: ‘মদন ঘরে ফেরে নাই’। মদন মিত্র সিবিআইয়ের দফতরে যাওয়ার আগে থেকেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুপুরে তাঁর গ্রেফতারির খবর চাউর হতে না-হতেই নেট দুনিয়ার মদন-চর্চা তুঙ্গে উঠল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় উঠে এসেছিল তাঁর উদ্ধৃতি। ‘গাঁধী, নেহরু, নেতাজি---সকলেই জেলে গিয়েছেন।’ বিকেল গড়াতে ফেসবুক বা হোয়াট্স অ্যাপ-এর বার্তা তাঁকেই নিশানা করল। টইটম্বুর রসবোধে বাঙালি লিখল: ‘মদন ঘরে ফেরে নাই’।

Advertisement

মদন মিত্র সিবিআইয়ের দফতরে যাওয়ার আগে থেকেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুপুরে তাঁর গ্রেফতারির খবর চাউর হতে না-হতেই নেট দুনিয়ার মদন-চর্চা তুঙ্গে উঠল। ফেসবুকে বহুল-চর্চিত বিষয় কোনগুলি জানাতে সারাক্ষণই ‘ট্রেন্ডিং’ বলে একটি তালিকা তুলে ধরা হয়। শুক্রবার বিকেল-সন্ধেয় তার এক নম্বরে ‘মদন মিত্র’।

যে দিকে তাকানো যায়, শুধুই তিনি। ফিচেল কার্টুন থেকে শুরু করে চেনা প্রবচন, ফিল্মি কবিতা-গানের প্যারোডিতে— খালি মদন আর মদন।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুপাঠ্য ‘হাট’ কবিতাটির সূত্রে মদনকে নিয়ে কৌতুক নতুন নয়। ‘গাড়ি চালায় বংশীবদন, সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন’— পংক্তিটি মনে করিয়ে পরিবহণমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকের একটি মন্তব্য, ‘বংশীবদনকে এ বার একাই গাড়ি চালাতে হবে।’ হাল আমলের জনপ্রিয় ছবি চতুষ্কোণ-এর হিট গান, ‘বসন্ত এসে গেছে’-র প্রেরণায় সোশ্যাল মিডিয়ার নয়া সংলাপ, ‘মদন তো ফেঁসে গেছে’! কাব্যপ্রেমীদের মধ্যে বহুচর্চিত, ‘অবনী বাড়ি আছো?’-র উপরেও মদনের ছায়া। বিকেল থেকেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতাটির আদলে চারটি টাটকা স্তবক ঘুরপাক খেতে শুরু করে হোয়াট্স অ্যাপ-ফেসবুকের আড্ডাচক্রে।

সুস্থ হতে ছিল না কোনও তাড়া/ তবু হাসপাতাল থেকে পেয়েছ ছাড়া/ মাথার ওপর সিবিআইয়ের ফাঁড়া/ মদন ভাল আছো? স্তবকে স্তবকে সেই কাব্যচর্চা ছুঁয়ে দিয়েছে ‘দিদি’ মমতাকেও। নেটিজেনদের চর্চায় ঘুরেফিরে এসেছে প্রশ্ন, ‘তবে কি পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর ফের সরতে চলেছে? মহাকরণ থেকে নবান্ন হয়ে এ বার প্রেসিডেন্সি জেল?’ রাজ্যবাসীর দিনভরের মদন-চর্চা পৌঁছে গিয়েছে খাস নবান্নে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও।

সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে প্রকাশ্য জনসভায় মমতা নিজেই বলেছিলেন, ‘কুণাল চোর? টুম্পাই চোর? মদন চোর? মুকুল চোর?

আমি চোর?’ কুণাল আগেই জেলে ঢুকেছেন। সিবিআইয়ের হাতে টুম্পাই, মদন পরপর গ্রেফতার হওয়ায় মমতার সেই কথাকেই বিঁধে ফেসবুকের একটি স্টেটাস বলেছে, ‘উফ্ফ পুরো খনার বচন। যে ক’টা নাম মুখে ছিল, সবার জেলে গমন’। মমতার মন্তব্য বুমেরাংয়ের মতো তাঁকেই তাড়া করেছে।

গত বিধানসভা ভোটের আগে পরিবর্তনের হয়ে সওয়াল করে এখন বীতশ্রদ্ধ দক্ষিণ শহরতলির এক তরুণীর মন্তব্য, ‘ম’দের পা টানাটানি শুরু---এ বার মাথা আসবে।’ শিশুপাঠ্য ‘হারাধনের দশটি ছেলে’র আদলে মমতার ‘দাগি’ সঙ্গীদের নিয়ে ফেসবুকে অজস্র ছড়া অনেক দিন ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে। এ দিন অন্য একটি চেনা লাইনকে মনে করিয়ে চেন্নাইয়ে কর্মরত এক রসিক বঙ্গসন্তানের চিমটি ‘একে একে নিভিছে দেউটি। আমি চোর! বাকি আর দু’টি।’ ফেসবুকের একটি গ্রুপে তৃণমূল সমর্থকদের ‘চাঙ্গা’ করার কথা বলে জনৈক ব্যক্তি পুরনো বাংলা ছবিতে ‘কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’ গানটির ভিডিও সেঁটে দিয়েছেন।

অজস্র কার্টুন। কোনওটায় ধারালো ঠাট্টা, কোনওটায় কটাক্ষ, কোথাও নির্ভেজাল হাসি। বিমর্ষ মুখের মন্ত্রী থেকে নেত্রীর ব্যঙ্গচিত্র দিনভর নেটদুনিয়ায় মদনের বরাদ্দ ছিল সবই। খবরের কাগজে প্রকাশিত গঙ্গাবক্ষে সরকারি লঞ্চে পরিবহণমন্ত্রীর খোশমেজাজি ছবির গায়ে লেখা ‘দাদা চেঞ্জে গেলেন’। আর একটি ছবিতে জোড়হস্ত এক যুবকের ছবি দিয়ে নিরীহ বিদায় সম্ভাষণ! মদনদা সাবধানে যাবেন, দুগ্গা দুগ্গা...

পশ্চিমবঙ্গের কোনও বিষয় বা ঘটনা ফেসবুকের ট্রেন্ডিং তালিকায় থাকে কদাচিৎ। যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে শহরে প্রতিবাদ-মিছিলের দিনগুলোয় আর সব ঘটনাকে পিছনে ফেলে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে ছিল ‘হোক কলরব’। এ দিন বিকেলেও ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট বা দিল্লির উবের ট্যাক্সি-কাণ্ডকে পিছনে ফেলে দেয় পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীর গ্রেফতারি। তবে রাজ্য-রাজনীতির এ হেন বিজ্ঞাপন যে গৌরবের নয়, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মন্তব্য, ‘হাসুন তবে ভাবুনও। এ বড় সুখের সময় নয়।’

সমালোচকদের এ সব ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে শাসক দলের সমর্থকরাও অবশ্য নিশ্চুপ নন। সোনারপুরের এক দিদি-ভক্তের ফেসবুক-পোস্টে ‘হাল ছেড়ো না’-ভঙ্গি। ‘দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’ তৃণমূল সমর্থকদের একটি ফোরামে পাল্টা হুঙ্কার, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গ্রেফতার করে বাংলার মাটিতে উন্নয়ন থামানো যাবে না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন