১১১ বাংলাদেশি ধীবরের মুক্তি, ইশারা মৈত্রীরই

বাংলাদেশে পৌঁছনোর আগে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে মৈত্রীর বার্তা দিতে রাজ্যের জেলে বন্দি সেখানকার ১১১ জন মৎস্যজীবীকে তড়িঘড়ি মুক্তি দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বুধবার রাতের খবর, এ দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হেফাজতে তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর উপকূল থানায় আছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

বাংলাদেশে পৌঁছনোর আগে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে মৈত্রীর বার্তা দিতে রাজ্যের জেলে বন্দি সেখানকার ১১১ জন মৎস্যজীবীকে তড়িঘড়ি মুক্তি দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বুধবার রাতের খবর, এ দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হেফাজতে তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর উপকূল থানায় আছেন। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁদের বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীর (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ দিনই বিকেলের দিকে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে সপার্ষদ রওনা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

গত ক’দিন ধরেই এই প্রক্রিয়া চলছিল নবান্নে। কী ভাবে অনুপ্রবেশ আইনে ধৃত মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেওয়া যায়, রাজ্য স্বরাস্ট্র দফতর সেই পরামর্শ চেয়েছিল আইন দফতরের কাছে। ওই দফতর সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ক্ষমতাবলে অনুপ্রবেশকারী মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে পারে রাজ্য সরকার, কিংবা আদালতে হাজির করার পরে অভিযুক্তদের জামিনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকতে পারে পুলিশ। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আদালতের নির্দেশেই ওই ১১১ জন মৎস্যজীবী মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেফতারের সময় পুলিশ তাঁদের যে তিনটি ট্রলার আটক করেছিল সেগুলিও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সূত্রের খবর, এই প্রক্রিয়ার পিছনে মূল উদ্যোগ ছিল কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের। দিন দশেক আগে ওই মন্ত্রকের এক জন যুগ্ম সচিব নবান্নে এসে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে দেখা করেন। বাংলাদেশে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি তৈরির পাশাপাশি দু’দেশের মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেওয়া নিয়েও কথা হয়। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে ৭৬ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী বন্দি আছেন। তাঁদেরও মুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে দিল্লিকে।” মৎস্যজীবী ‘প্রত্যর্পণ’ প্রক্রিয়াটি যাতে গতি পায় তার জন্য কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের সঙ্গে রাজ্যকেও কথা বলতে পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, গত দু’মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ, কুলতলি-সহ একাধিক এলাকা থেকে ওই ১১১ জন মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁরা সকলেই আলিপুর জেলে ছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫৬ জনকে এবং ১৭ তারিখে ৫৫ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় মৎস্যজীবীদের। তারাই উপকূল রক্ষী বাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তায় নিয়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে।

এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে এখনও ১৮০০-র বেশি বাংলাদেশি বিচারাধীন অবস্থায় বন্দি আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯৭ জন মহিলা। নাবালকের সংখ্যা ১৭৭। এ ছাড়াও প্রায় ১১০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক আছেন, যাঁরা সাজা খাটছেন। আর সাজা খাটার সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও জেলে বন্দি আছেন সেই সংখ্যাটা ৫০০-এর কাছাকাছি। জেলের পরিভাষায় এঁদের বলে ‘জান খালাস’। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, এমন ‘জান খালাস’ ২১৬ জনকে জানুয়ারিতে বাংলাদেশে হাতে তুলে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শ’খানেক মুক্তির অপেক্ষায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে বার্তা দিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন