ধুলোয় মিশে গেল ঐতিহ্যের ন’তলা মিনার

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান। প্রায় দু’শো বছরের পুরনো মিনারটা চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখেছেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দা সুজাতা থাপা। সবটা দেখেও তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি প্রথমে। কিন্তু ভুলটা ভাঙে তার পরেই। মানুষের আর্ত চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পান। খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছিলেন সুজাতা। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

শনিবার ভূমিকম্পের পরে নিশ্চিহ্ন ধরহরা মিনার। চলছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান। প্রায় দু’শো বছরের পুরনো মিনারটা চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে দেখেছেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দা সুজাতা থাপা। সবটা দেখেও তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি প্রথমে। কিন্তু ভুলটা ভাঙে তার পরেই। মানুষের আর্ত চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পান। খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছিলেন সুজাতা। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন জানাচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী ধরহরা মিনারের তলায় চাপা পড়ে আজ মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে দু’শো জনের। আজকের ভয়াল ভূমিকম্পে প্রায় মাটিতে মিশে গিয়েছে কাঠমান্ডুর অন্যতম এই আকর্ষণ। পঞ্চাশ মিটার উঁচু এই মিনারের অবশিষ্ট বলতে রয়েছে শুধু ভিতটুকুই। এই নিয়ে দু’বার ভূমিকম্পে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হল এই মিনার। ১৮৩২ সালে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভীমসেন থাপা তৈরি করেছিলেন এই মিনার। কিন্তু ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে প্রায় পুরোটাই ভেঙে পড়ে মিনারটি। তখন প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধশামসের রানার তত্ত্বাবধানে ফের তৈরি করা হয় সেটি। এ বার ২০১৫-র ভূমিকম্প আবার কোপ বসাল এই মিনারে।

Advertisement

ধরহরার আটতলা থেকে দেখা যেত গোটা কাঠমান্ডু শহরটা। আর তার টানেই পর্যটকরা ভিড় জমাতেন প্রাচীন এই মিনার দেখতে। আজ যখন প্রথম কম্পন শুরু হয়, তত ক্ষণে প্রায় দু’শো জনের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন মিনার কর্তৃপক্ষ। কম্পনের জেরে যখন মিনার হেলতে শুরু করেছে, তখন আর পর্যটকদের তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা ছিল না। মিনারের মধ্যে বন্দি হয়ে প্রাণ গিয়েছে দু’শো জনের।

‘‘ধরহরার সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দুলুনিটা অনুভব করি। দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম আস্তে আস্তে মাটিতে মিশে যাচ্ছে মিনারটা। প্রবল কান্না আর চিৎকার কানে আসছিল,’’ কাঠমান্ডুর টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন বছর বাইশের সুজাতা। গোটা কাঠমান্ডু শহরটাই বিচ্ছিন্ন ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাটিতে মিশে গিয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির। পাটানে পুরনো রাজবাড়ির কাছে ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া দরবার স্কোয়ারও। ভারতীয় ছবিতে নেপালের দৃশ্য বলতেই সবার আগে মনে পড়ে দরবার স্কোয়ারের প্যাগোডা ধাঁচের বাড়িগুলো। প্রকৃতির কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে সে সব এখন অতীত। তবে কাঠমান্ডুর আর এক আকর্ষণ, পশুপতিনাথ মন্দির অক্ষতই রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

এই রকমই ছিল ধরহরা মিনার।

রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় এখন উপড়ে পড়ে রয়েছে গাছ। ভেঙে পড়া বাড়ির স্তূপ। পিচ ঢালা রাস্তাগুলোও ভেঙেচুরে সমুদ্রের স্রোতের মতো এঁকেবেঁকে গিয়েছে। হাসপাতালগুলি উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়ে। সুজাতার মতোই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দা লোবেন শেরপা। নিমেষে বহু মানুষের মৃত্যু দেখে স্তম্ভিত পর্বতারোহণ সংস্থার এই কর্ণধার। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তায় হাঁটছিলাম। হঠাৎই টের পেলাম, মাটি কাঁপছে। টাল রাখতে পারছিলাম না। চোখের সামনে ভেঙে পড়ল রাস্তার উল্টো দিকের একটা বহুতল। ঠিক যেন খেলনা। স্পষ্ট দেখলাম, অনেকগুলো লোক চাপা পড়ে গেল বাড়িটার তলায়। সবাই প্রাণ ভয়ে ছুটছে এ-দিক ও-দিক। একটা খোলা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। একটু ধাতস্থ হতেই ফের কম্পন। এ বার তীব্রতা একটু কম বলে মনে হল। চার পাশে তত ক্ষণে অনেক বাড়ি ভেঙে পড়েছে।’’

ভূমিকম্পের জেরে আজ সারাদিন ভীষণ ভাবে ব্যাহত হয়েছে নেপালের বিমান পরিষেবা। কম্পনের পরেই কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয় নেপাল সরকার। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর সন্ধ্যায় ফের খুলে দেওয়া হয় বিমানবন্দর। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, আজ দুপুরে তাদের একটি বিমানের কাঠমান্ডু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই বিমানটি বাতিল করা হয়। আগামী কাল সকালে সেটি কাঠমান্ডু যাবে।

ছবি: এপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন