খালেদা’র দুই মন্ত্রীর ফাঁসি বহাল সুপ্রিম কোর্টে

খালেদা জমানার দুই মন্ত্র্রীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণদণ্ডের রায় দিয়েছিল ২০১৩ সালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৫ ২০:৩৩
Share:

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদ।—ফাইল চিত্র।

খালেদা জমানার দুই মন্ত্র্রীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণদণ্ডের রায় দিয়েছিল ২০১৩ সালে। ওই বছরের জুলাই মাসে একই আদালত আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনায়। এর পর এ বছরের জুন এবং জুলাই মাসে তাঁদের দু’জনেরই ওই ফাঁসির সাজা বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার সেই সাজা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যায় শীর্ষ আদালতে। এর ফলে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামাতে ইসলামির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইনি কোনও বাধা থাকল না। তবে, এর পরেও তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানাতে পারবে।

Advertisement

খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় মুজাহিদ ছিল প্রভাবশালী সদস্য আর সালাউদ্দিন ছিল মন্ত্রীর মর্যাদায় সংসদ উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা বাঙালি জাতির কাছে এই দু’জনের নাম ও পরিচিতি ছিল ভয়ঙ্কর আতঙ্কের। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে আল বদর কম্যাণ্ডার হিসেবে মুজাহিদ যেমন ঠাণ্ডা মাথায় বাংলাদেশের সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের খুনের পরিকল্পনা করেছিল, তেমনই সালাউদ্দিনও ছিল চট্টগ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। স্বাধীন বাংলাদেশেও সালাউদ্দিন কাদের গর্ব করে নিজেকে পাকিস্তানের সেবক ও আইএসআই-এর পৃষ্ঠপোষকতার পরিচয় দিয়ে বেড়াত।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্‌হার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিশেষ প্যানেল এ দিন এক মিনিটের ব্যবধানে দু’জনের আবেদন খারিজ করে দেয়। মঙ্গলবার মুজাহিদিনের আবেদন নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা শুনানি হয়। এ দিন কাদের চৌধুরীর আবেদন নিয়ে শুনানি চলে ঘণ্টা দেড়েক। সালাউদ্দিনই প্রথম বিএনপি নেতা, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাঁর ফাঁসি হতে চলেছে। এ দিনের রায়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি গণজাগরণ মঞ্চ ও আওয়ামি লিগের সমর্থকেরা।

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের প্রখ্যাত কবিরাজি ওষুধ সংস্থার মালিক নূতনচন্দ্র সিংহকে হত্যা, দু’-দু’টি গণহত্যায় মদত এবং হাটহাজারির আওয়ামি লিগ নেতা ও তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে খুন করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। সালাউদ্দিন কাদেরের বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিল পাকিস্তানি সেনার আশ্রয়দাতা। তার বিরুদ্ধেও অসংখ্য খুনের অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ফজলুল। দেশ ছাড়ে সালাউদ্দিন। ১৯৭৫-এ শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর তৎকালীন শাসক জিয়াউর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় দেশে ফিরে ফের রাজনীতিতে নামে সালাউদ্দিন। বেশ ক’বার চট্টগ্রাম থেকেই সাংসদ নির্বাচিত হয়। সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসির রায় বহাল রাখার পর তা পুনর্বিবেচনার আবেদন জানায় ৬৬ বছর বয়সি এই বিএনপি নেতা। কিন্তু এ দিন তা খারিজ হয়ে গেল।

অধ্যাপক এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান পরিকল্পক হিসেবে আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আদালতে তোলা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১৯৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু-হত্যা ও নিপীড়নের দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ওই গ্রামের পুরুষদের সে দিন পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছিল। জামাতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতা ছিল মুজাহিদ। সে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিগত জোট সরকারে সে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিল। ইতিহাস অনুযায়ী, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ছাত্রাবস্থায় ইসলামি ছাত্র সংঘে (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন) যোগ দেয় মুজাহিদ। ১৯৬৮ থেকে ৭০— এই দু’বছর সে ফরিদপুর জেলা ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিল। ১৯৭০ সালে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ওই বছরই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সম্পাদক হয়। এর পর সে ছাত্র সংঘের সভাপতি এবং আল বদর বাহিনীর প্রধান পদেও কাজ করে। এই সময়েই সে দুষ্কর্মগুলি করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন