জঙ্গিদের রুখে দিয়েও আতঙ্কে পাক-ক্রিকেট

রাত ন’টা। শুক্রবার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লাহৌরের কালমা চক। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গদ্দাফি স্টেডিয়ামে তখন চলছিল পাকিস্তান বনাম জিম্বাবোয়ে ম্যাচ। ছ’বছর পরে দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের অনুমতি মিলেছে। দর্শকও হয়েছিল বিশ হাজারের উপর। বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে এল সেখানেও। এল আরও একটা খবর। ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ। ভয়ের কিছু নেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লাহৌর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:৩৯
Share:

বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স।

রাত ন’টা। শুক্রবার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লাহৌরের কালমা চক। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গদ্দাফি স্টেডিয়ামে তখন চলছিল পাকিস্তান বনাম জিম্বাবোয়ে ম্যাচ। ছ’বছর পরে দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের অনুমতি মিলেছে। দর্শকও হয়েছিল বিশ হাজারের উপর। বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে এল সেখানেও। এল আরও একটা খবর। ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ। ভয়ের কিছু নেই।

Advertisement

যদিও ২৪ ঘণ্টার মাথাতেই বদলাল খবরটা। খোদ তথ্য-মন্ত্রী পারভেজ রাশিদ সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণে নয়, আত্মঘাতী জঙ্গি হানা। এক পুলিশকর্মীর প্রাণের বিনিময়ে এ যাত্রায় রক্ষা মিলেছে।

প্রশংসা করে রশিদ বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান সম্প্রচার মন্ত্রক দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টা সামলেছে।’’ অর্থাৎ দর্শকদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে, আরও বড় বিপদ এড়াতে তাই সুকৌশলে চেপে দেওয়া হয়েছে খবর। নির্বিঘ্নে মিটেছে ম্যাচ। জিম্বাবোয়ে দলও জানিয়েছে তারা রবিবারের ফাইনাল ম্যাচ খেলেই ঘরে ফিরবে।

Advertisement

সংবাদ মাধ্যমের কাছে রশিদ মুখ খোলায় ক্ষুব্ধ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। অভিযোগ, টুর্নামেন্ট শেষের আগেই জঙ্গি হানা নিয়ে কথা বলে দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে অন্যরা। অস্বস্তিটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এ বার না হয় রক্ষা মিলল। তবে এর পরেও কি অন্য কোনও দেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পাকিস্তানে আসতে রাজি হবে?

ছ’বছর আগে ২০০৯ সালে এই গদ্দাফি স্টেডিয়ামের বাইরেই তালিবান হানার মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। সে বার ছ’জন ক্রিকেটার জখম হন। নিহত হন ৬ পুলিশকর্মী ও এক পথচলতি মানুষ। তার পর থেকেই পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। এ বার জিম্বাবোয়ে দলকে দেশে আনতেও কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি পাকিস্তানকে। রাষ্ট্রপতির সমতুল্য নিরাপত্তা ও মোটা অর্থের বিনিময়ে পাকিস্তানে আসতে রাজি হয় তারা। পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) খাতায়কলমে স্বীকৃতি দিয়েছিল সিরিজটিকে। যদিও তারা প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়নি।

ঠিক কী ঘটেছিল গত কাল? দিন-রাতের ম্যাচ। ৯টা নাগাদ গদ্দাফি উত্তেজনায় ফুটছে। জিতছে দেশ। হঠাৎই এল বিস্ফোরণের আওয়াজ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে ছড়াল খবর, স্টেডিয়ামের কাছে একটি ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও স্টেডিয়ামের এক কিলোমিটারের মধ্যে কালমা চকে যে বিস্ফোরণটি ঘটেছিল, সরকার আজ জানিয়েছে, তা এক কথায় জঙ্গি হামলা। প্রশাসন সূত্রে খবর, রিকশায় বসে থাকা এক যাত্রীকে দেখে সন্দেহ হয় আব্দুল আজাদ নামে এক সাব-ইনস্পেক্টরের। জেরা করতে এগিয়ে যান তিনি। বুঝতে পেরেই সে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় নিজেকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আজাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। যদিও টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে পিসিবি বিবৃতি দিয়ে জানায়, ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থল ঘিরেছে পুলিশ। প্রবেশ নিষেধ সাংবাদিকদেরও। মুখে কুলুপ আঁটে পুলিশও। কিছু ক্ষণে টিভি থেকেও হারিয়ে যায় খবর।

পাক প্রশাসন অবশ্য খবর চেপে যাওয়ার বিষয়টাকে তাদের সাফল্য হিসেবেই দেখাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে পদপিষ্ট হয়েই অন্তত হাজার খানেক মানুষ প্রাণ হারাতেন।

আবার অন্য একটি সূত্রে খবর, ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতেই রিকশার বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। যে উদ্দেশ্য সফল ভাবে নস্যাৎ করে দিয়েছে পাক-পুলিশ। সন্ত্রাসবাদীদের আসল উদ্দেশ্য ছিল, সেই সুযোগে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে পড়া। এক জঙ্গি চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু সে ধরা পড়ে যায়। পুলিশ গোপনেই তাকে খতম করে দিয়েছে।

সিরিজের পাঁচটা ম্যাচই নিজের ঝুলিতে পুরেছে পাকিস্তান। আগামিকাল হয়তো ষষ্ঠ তথা অন্তিম ম্যাচেও জয় আসবে। যদিও প্রশ্ন থাকছেই, এই সিরিজে যে জয় হাসিল করতে চেয়েছিল পাকিস্তান, তা কি আদৌ এল? পাঁচ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে জিম্বাবোয়ে দলকে প্রায় ‘কিনে’ এনেছিল পিসিবি। ভারত-ইংল্যান্ডের মতো দেশ কি এ ভাবে খেলতে রাজি হবে? চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বকে বার্তা দিতে সিরিজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’

অভয়-বার্তা কি পৌঁছল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন