করাচির বাসে আইএস-এর হানা, হত ৪৭

ঘড়িতে সাড়ে ন’টা। অফিস টাইম। জনা ষাটেক যাত্রী নিয়ে বাসটা সবে থেমেছিল দক্ষিণ করাচির সাফুরা চকে। হঠাই পথ আটকে দাঁড়াল পুলিশের পোশাক পরা ছয় বাইক-আরোহী। বেরিয়ে এল কালাশনিকভ ও ৯ এমএম পিস্তল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস লক্ষ্য করে ছুটে আসতে লাগল গুলির পর গুলি। ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বাসের দেওয়াল থেকে তখনই চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। বন্দুকবাজরা এর পর লাফিয়ে উঠে পড়ল বাসে। যাত্রীদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে চলল নিধন-যজ্ঞ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

করাচি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৩:১০
Share:

স্বজন হারিয়ে। করাচিতে। ছবি: এপি।

ঘড়িতে সাড়ে ন’টা। অফিস টাইম। জনা ষাটেক যাত্রী নিয়ে বাসটা সবে থেমেছিল দক্ষিণ করাচির সাফুরা চকে।

Advertisement

হঠাই পথ আটকে দাঁড়াল পুলিশের পোশাক পরা ছয় বাইক-আরোহী। বেরিয়ে এল কালাশনিকভ ও ৯ এমএম পিস্তল।

কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস লক্ষ্য করে ছুটে আসতে লাগল গুলির পর গুলি। ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া বাসের দেওয়াল থেকে তখনই চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। বন্দুকবাজরা এর পর লাফিয়ে উঠে পড়ল বাসে। যাত্রীদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে চলল নিধন-যজ্ঞ।

Advertisement

সব শেষে বাসের রক্তাক্ত আসনে, মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে থাকা দেহগুলোর উপর উড়িয়ে দিয়ে গেল লিফলেট। তাতে সগর্ব দাবি— ‘কৃতিত্ব ইসলামিক স্টেটের’। টুইটও করল, ‘‘উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ। ৪৩ জনকে হত্যা করেছি আমরা।’’ যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৭। যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, সেই ১৩ জনের অবস্থাও গুরুতর।

বেঁচে ফেরা এক যাত্রী জানালেন, প্রথমটা তাঁরা ভেবেছিলেন, ডাকাত পড়েছে বুঝি। জঙ্গিরা বাসে উঠেই চালককে বের করে দেয়। নামিয়ে দেওয়া হয় দু’টি বাচ্চাকেও। তার পর যাত্রীদের বলা হয়, মাথা নিচু করে বসতে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে চললেন ওই তরুণী, ‘‘...এর পরেই বাসের পিছন দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক জঙ্গি চিৎকার করে উঠল, ‘মেরে ফেল ওদের’। শুরু হল হত্যালীলা।’’

শরীরে গুলির ক্ষত নিয়ে তরুণীটি কোনও মতে লুকিয়ে পড়েছিলেন আসনের পিছনে। টুঁ শব্দটি করলেই সাক্ষাৎ মৃত্যু। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিলেন। বললেন, ‘‘ওরা এক এক করে প্রত্যেকটা দেহ সরিয়ে দেখছিল, কারও শ্বাস পড়ছে কি না। কী ভাবে যে এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছি...!’’

তবে এ-ও তো মরে বেঁচে থাকা— আক্ষেপ এক ‘ইসমাইলি’-র। পাকিস্তান মূলত সুন্নি-প্রধান দেশ। ‘ইসমাইলি’-রা হলেন শিয়াদের শাখা-সম্প্রদায়। আজ আক্রান্ত বাসটির যাত্রীদের প্রায় সকলেই ইসমাইলি। বাসটি ছিল ‘আল আজহার গার্ডেন ওয়েলফেয়ার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। তাদের একটি অল্প ভাড়ার আবাসনে থাকতেন ওই ইসমাইলিরা। তাদেরই গাড়িতে কাজের জায়গায় যাতায়াত করতেন। বেশির ভাগই ছোটখাটো দোকানি। আর পাঁচটা দিনের মতো আজও বাসে উঠেছিলেন। আধ ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ।

এই হত্যাকাণ্ডে এক দিকে যখন আইএস-এর নাম উঠছে, তখন ‘জুনদুল্লাহ’ নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করে বলেছে, ‘‘আমরা ওই ইসমাইলিদের মুসলিম হিসেবে ধরিই না। ভবিষ্যতে আরও আরও হামলা চালাব।’’

আল কায়দা সমর্থিত তেহরিক-ই-তালিবানের শাখা সংগঠন জুনদুল্লাহ আগেও বহু বার হামলা চালিয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর। গত জানুয়ারিতেই একটি শিয়া মসজিদের সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জুনদুল্লাহ। সে বার ৬৭ জন মারা যান।

এই হামলার ঘটনায় অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ঘটনার নিন্দা করেছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। বলেছেন, ‘‘এই কঠিন মুহূর্তে আমরা পাক জনতার পাশে আছি। আহতেরা দ্রুত সেরে উঠুন।’’

তবে বাস্তব হল, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের হত্যার কিন্তু বিরাম নেই। ‘‘যেন প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে বেড়াচ্ছে মৃত্যু’’, কান্না গিলে বললেন এক স্বজনহারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন