ধর্ষণকারী সহ-পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। —প্রতীকী চিত্র।
এক মহিলাকে ধর্ষণ এবং তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধরের পরে সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় বাংলাদেশ। ওই ঘটনায় ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই সংখ্যালঘু হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনাটিতে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক রং লাগতে শুরু করেছে। বিএনপি-র অভিযোগ, ধর্ষণকারী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। সেই অভিযোগ খারিজ করে আওয়ামী লীগের দাবি, অভিযুক্ত বিএনপি-রই নেতা, এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করেছিল। নির্যাতনের ভিডিয়োটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাই কোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, দুই সন্তানের মা ২৫ বছর বয়সি ওই নির্যাতিতা মুরাদনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, তাঁর স্বামী গত পাঁচ বছর ধরে বিদেশে চাকরি করেন। দিন পনেরো আগে তিনি বাপের বাড়িতে আসেন। ঘটনার রাতে ফজর আলি নামে এক ব্যক্তি দরজা খুলতে বলে। নির্যাতিতা রাজি না হলে সে দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করে। পরে বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁকে মারধর করে জনা দশেক ব্যক্তি। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ৫১ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ১০-১২ জন লোক ওই বিবস্ত্র মহিলাকে মারধর করছে এবং তিনি আর্তনাদ করছেন। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমকে ওই নির্যাতিতা বলেছেন, ‘‘চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। তারাই ফজর আলিকে ধরে ফেলেন এবং পেটাতে থাকেন। বিবস্ত্র অবস্থায় থাকা আমাকেও মারধর করে। পুলিশ যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে তারাই ওই ভিডিয়ো করেছিল।’’
নির্যাতিতার কাকিমা বলেছেন, ‘‘পাশের বাড়িতে পুজো হচ্ছিল। চিৎকার শুনে দৌড়ে পুজোর অনুষ্ঠানে যাই এবং লোকজন ডেকে আনি।’’ নির্যাতিতার ভাই জানিয়েছেন, চার হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে এক মাসের জন্য তাঁদের পরিবার ফজর আলির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে পারেননি তাঁরা। আরও কিছুটা সময় চেয়েছিলেন তাঁরা, কিন্তু ফজর তা না দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে টাকা আদায় করতে এসে, ফাঁকা বাড়িতে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। উত্তেজিত জনতা ফজরকে বেধড়ক মারধর করে। সেহাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘‘অনেকেই বিষয়টি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক বলে প্রচার করেছেন। কিন্তু তা সত্যি নয়। ওই মহিলা পাশবিক নির্যাতনের শিকার। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ।’’
অভিযুক্ত ফজর আলির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। তাঁরা জানান, ফজর নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে ও ৫ অগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে দাপট দেখাতে থাকে। বিএনপি নেতা রহুল কবির রজভী বলেন, ‘‘মুরাদনগরে অপকর্ম করেছে আওয়ামী লীগের এক নেতা। আর আমাদের দলের নামে চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, কিন্তু তাদের দোসররা বসে নেই, অপকর্ম করেই চলেছেন।’’
আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গির কবির নানকের পাল্টা, ‘‘এটা বিএনপি-র পুরনো অভ্যাস। দলের নিচুস্তরের নেতা-কর্মীদের উপরে বিএনপি-র কোনও লাগাম নেই। দেশে কোনও আইনশৃঙ্খলা নেই। গত ৫ অগস্ট থেকে বিএনপি, জামায়াতে এবং শিবির বাংলাদেশকে উগ্রবাদীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করেছে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে