কান শুধু নয়, চোখও আছে দেওয়ালের! অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাটিতে-আকাশে নজরদারি চালায় সব দেশই। ইজরায়েলে নজরদার দেওয়াল রয়েছে মাটির নীচেও! এই দেওয়াল দেখতে পায়। শুনতেও পায়। আর এই পাতালরক্ষীর জোরেই গাজা ভূখণ্ডের সীমান্তে প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের একটি সুড়ঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল সেনা। নিহত হয়েছে ইসলামিক জেহাদ গোষ্ঠীর প্রধান-সহ ৭ প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি ।
হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, ওই সুড়ঙ্গের ভিতরে ইসলামিক জেহাদের সদস্যদের বাঁচাতে গিয়ে তাদের দুই বন্দুকবাজেরও মৃত্যু হয়েছে। ইসলামিক জেহাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, গোষ্ঠীর শীর্ষ স্তরের আরও কয়েক জন নেতা মারা গিয়েছে ইজরায়েলি অভিযানে। তারা হুমকি দিয়েছে, ‘সব রাস্তাই খোলা। যে কোনও ভাবে এর বদলা নেওয়া হবে।’ তবে মনে করা হচ্ছে, হামাস বা ইজরায়েল, কোনও পক্ষই তেড়েফুঁড়ে এমন কিছু করতে চাইছে না, যাতে এলাকার পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অক্টোবরের গোড়াতেই প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মামুদ আব্বাসের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে হামাসের। সুড়ঙ্গ ধ্বংসের ঘটনায় হামাস বলেছে, ‘‘প্যালেস্তিনীয়দের আবার ঐক্যবদ্ধ করার কাজ বানচাল করার এটা এক ব্যর্থ চেষ্টা।’’
ইজরায়েলের সামরিক মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, ‘‘গাজার খান ইউনুস শহরে সীমান্ত বরাবর ওই সুড়ঙ্গ খোড়া হচ্ছিল। গত সোমবার অভিযান চালানো হয়েছে ইজরায়েলি অংশে। আমরা উত্তেজনা বাড়াতে আগ্রহী নই। তবে যে কোনও রকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।’’
ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর দক্ষিণপন্থী দল লিকুদ পার্টির নেতাদের কাছে বলেছেন, ‘‘সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়াটা আধুনিক প্রয়ুক্তি কামাল।’’ গাজার ৬০ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর মাটির নীচে দেওয়াল গড়ছে নেতানিয়াহুর দেশ। এই দেওয়ালে রয়েছে ‘সেন্সর’। অর্থাৎ মাটির নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুড়েও যদি কেউ ঢোকার চেষ্টা করে, তৎক্ষণাৎ তা টের পাওয়া যায়। এই ‘স্পর্শকাতর’ দেওয়াল তৈরির কাজ ২০১৯ নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। কাজ শেষের আগেই এল সাফল্য।
প্রতিরক্ষা ক্ষমতায় বহু গুণ এগিয়ে থাকা ইজরায়েলি বাহিনীকে হামাস যোদ্ধারা বেজায় বেগ দিয়েছিল ২০১৪ সালে গাজা-যুদ্ধের সময়ে। ডজন ডজন সুড়ঙ্গ খুড়ে তারা ইজরায়েলি দখলে থাকা এলাকায় ঢুকে হামলা চালিয়ে উধাও হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই মাটির নীচে চোখ-কানওয়ালা এই পাকাপোক্ত পাহারাদার বসাচ্ছে ইজরায়েল।
ভারতে হামলা চালাতে পাক জঙ্গিরাও বারবার সীমান্তে সুড়ঙ্গ খুড়ছে। এমন সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে বেশ কয়েক বারই হামলার ছক ভেস্তে দিয়েছে বিএসএফ ও সেনা। কিন্তু দুর্গম এলাকায় এমন সুড়ঙ্গের খোঁজ পেতে এখনও জওয়ানদের টহলদারিই মূল ভরসা ভারতের। এখন সাহায্য মিলছে ড্রোনেরও। তবে মাটির নীচে নজরদারির প্রযুক্তি এখনও হাতে নেই ভারতের।