Bangladesh Situation

বাংলাদেশ কি ফের ভারতীয় ভূখণ্ড নিজেদের দিকে টেনে দেখাতে চাইল? বইয়ের প্রচ্ছদের নকশা ঘিরে বিতর্ক

শনিবার পাক সেনাকর্তাকে একটি বই উপহার দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বইয়ের প্রচ্ছদ ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। প্রচ্ছদে একটি নকশা রয়েছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানচিত্রের অনেকটা মিল রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:২৫
Share:

পাক সেনাকর্তা সাহির মির্জ়াকে ‘আর্ট অফ ট্রায়াম্প’ বই উপহার দেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এই বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়েই বিতর্ক। ছবি: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সমাজমাধ্যম পাতা থেকে।

ভারতীয় ভূখণ্ডের একটি অংশকে কি নিজেদের দিকে টেনে দেখানোর চেষ্টা করল বাংলাদেশ? প্রকাশ্যে আসা একটি ছবি ঘিরে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে সমাজমাধ্যমে। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, এমন কিছুই ঘটেনি। নয়াদিল্লির তরফে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি স্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

Advertisement

গত বছর বাংলাদেশের এক উপদেষ্টা এক মানচিত্রে ভারতীয় ভূখণ্ডকে বাংলাদেশের অংশ হিসাবে দেখিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছিল। ফলে নতুন করে এমন একটি ছবি প্রকাশ্যে আসায় ফের শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিতর্কের সূত্রপাত রবিবার দুপুরে। গত শনিবার রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনার ‘জয়েন্ট চিফ্‌স অফ স্টাফ কমিটি’র চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জ়ার সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সমাজমাধ্যম পাতায় ওই বৈঠকের নির্যাস পোস্ট করা হয়। সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাকর্তার সঙ্গে ইউনূসের কিছু ছবিও পোস্ট করা হয়। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ‘আর্ট অফ ট্রায়াম্প’ নামে একটি বই ধরে রয়েছেন ইউনূস এবং পাক সেনাকর্তা। গত বছরের জুলাই আন্দোলন সংক্রান্ত ওই বইয়ের প্রচ্ছদ ঘিরেই যত বিতর্ক।

বইটির প্রচ্ছদে একটি নকশা দেখা যাচ্ছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানচিত্রের অনেকটা মিল রয়েছে। নকশার ভিতরে সবুজ এবং লাল রঙের (বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দু’টি রঙ) কারুকার্য করা রয়েছে। নকশার মাঝে একটি লাল রঙের গোল কারুকার্য করা, বাকি অংশটি সবুজ রঙা। ওই নকশাটিতে যে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে বোঝানো হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। তবে ওই নকশাকে বাংলাদেশের মানচিত্র বলে ধরে নিলে, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে উত্তরপূর্ব ভারতের কিছু অংশকেও বাংলাদেশের ভিতরে টেনে দেখানো হচ্ছে। এই ‘বিতর্কিত’ নকশা আঁকা ছবি নিয়েই নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে।

Advertisement

বিতর্কের মাঝেই মুখ খুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সমাজমাধ্যমে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের পতাকায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে জুড়ে দেওয়ার দাবি ‘অসত্য’।

ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশের আরো দাবি, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকা-সহ গোটা বাংলাদেশের বিভিন্ন দেওয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ পাকিস্তানের জেনারেলকে উপহার দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা লিখেছে, ‘এটি গণঅভ্যুত্থানের উপর রচিত একটি সচিত্র দলিল। এর মধ্যে সংকলিত হয়েছে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ঐতিহাসিক চিত্র। সংকলনটি প্রকাশ করেছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য, “প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারও কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনও অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহু ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।”

গত বছরের ডিসেম্বরেও মানচিত্র ঘিরে এমন বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা তথা জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহফুজ আলম সমাজমাধ্যমে একটি মানচিত্র পোস্ট করেছিলেন। সেখানেও ভারতের কিছু অংশকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত বলে দেখিয়েছিলেন তিনি। তা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিতর্কের মুখে ওই পোস্টটি সমাজমাধ্যম থেকে মুছে ফেলেন মাহফুজ। এ বার ফের ইউনূস এবং পাক সেনাকর্তার বৈঠকের ওই ছবি ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধল।

বস্তুত, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা এবং নয়াদিল্লির মধ্যে এক কূটনৈতিক চাপানউতর সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দিল্লিতে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে ইউনূস প্রশাসন। ভারত ওই কূটনৈতিক বার্তার প্রাপ্তিস্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে জানায়নি।

এই কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝে অতীতেও উত্তরপূর্ব ভারতকে টেনে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে ইউনূসকে। কখনও বাংলাদেশে চিনা বিনিয়োগ টানতে, কখনও নেপালের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় উত্তরপূর্ব ভারতের প্রসঙ্গ টেনেছেন তিনি। চলতি বছরেরই মার্চে চিন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ইউনূস বলেন, “সমুদ্রের (বঙ্গোপসাগর) একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” চিন এবং বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন যে, “ভারতের পূর্ব দিকের সাত রাজ্যকে বলা হয় সাত বোন। এগুলি স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা। এদের সমুদ্রে পৌঁছোনোর কোনও পথ নেই।” ভৌগোলিক এই অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করার যে ‘বড় সুযোগ’ চিন পাবে, তা স্পষ্ট করেন ইউনূস।

পরবর্তী সময়ে, গত মে মাসেও নেপালের পার্লামেন্টের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সঙ্গে বৈঠকে উত্তরপূর্ব ভারতকে টেনে মন্তব্য করেছিলেন ইউনূস। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের জন্য একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আলাদা ভাবে নয়, একসাথে কাজ করলেই আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement