উত্তরাধিকারী: কাউন্টেস মাউন্টব্যাটন অব বর্মার শেষকৃত্যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও যুবরাজ চার্লস। সোমবার লন্ডনের সেন্ট পলস গির্জায়। ছবি: রয়টার্স।
মাঝরাতে একটা ফোন আসত ক্যামিলা পার্কারের কাছে। বর্তমান স্ত্রী ক্যামিলা তখন যুবরাজ চার্লসের প্রেমিকা। ফোনের ও-পারে নারীকণ্ঠ নিজের নাম বলত না। হিমশীতল গলাটা শুধু ফিসফিস করে বলত, ‘‘আমি তোমায় খুন করতে লোক পাঠিয়েছি। দেখ, তোমার বাগানেই রয়েছে। জানলা দিয়ে দেখ। কি? দেখতে পেলে?’’ এই অবধি বলেই কেটে যেত ফোনের লাইন।
মধ্যরাতে ফোনের ও-পারের সেই রহস্যময়ী নাকি আর কেউ নন, যুবরানি ডায়না। তখন যিনি চার্লসের স্ত্রী। ‘দ্য ডাচেস: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইয়ে এই রকমই বিস্ফোরক দাবি করেছেন রাজপরিবারের জীবনীকার পেনি জুনর। আগামী মাসে, ক্যামিলার ৭০ বছরের জন্মদিনে প্রকাশিত হবে সেই বই।
বইয়ে পেনি দাবি করেছেন, ডায়ানার সঙ্গে বিয়ের আগে ক্যামিলার সঙ্গে বছর দুয়েক সম্পর্ক ছিল চার্লসের। তা সত্ত্বেও ডায়ানাকে বিয়ে করেন চার্লস। ক্যামিলাও বিয়ে করেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিককে। বিয়ের আগে ক্যামিলার সঙ্গে সদ্ভাব ছিল ডায়ানার। যদিও বিয়ের পরে দূরত্ব বাড়ে দু’জনের। ডায়না-চার্লস উপস্থিত থাকতে পারেন, এমন অনুষ্ঠানগুলি এড়িয়েই চলতেন ক্যামিলা। অন্য দিকে, স্বামীর আচার-আচারণে সন্দেহ বাড়তে থাকে ডায়ানারও। সেই সময় বেশ কয়েক বার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলেন যুবরানি।
নব্বইয়ের দশক থেকেই মানসিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে ডায়ানার। সব সময়ে ভয় পেতেন, ঘনিষ্ঠ সবাই তাঁর ক্ষতি করার চক্রান্ত করছে। এই সন্দেহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এমনকী সেই সময় ব্যক্তিগত সচিব প্যাট্রিক জেপসনের উপর থেকেও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। প্যাট্রিককে তিনি এক বার লিখেছিলেন, ‘‘আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে বেইমানি করছ।’’
আরও পড়ুন: আলিঙ্গনে নেই ভিসা বা ব্যবসা
১৯৯৪ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে চার্লস প্রথম ক্যামিলার সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন। এর পরেই ক্যামিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যান তাঁর স্বামী অ্যান্ড্রু পার্কার।
এক বছর বাদে একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেন ডায়ানাও। জানান, জেমস হিউইটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা। ডায়ানাকে ঘোড়া চালানো শেখাতেন তিনি। সেখানে চার্লসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিতও দেন ডায়ানা। নিজের দাম্পত্য সম্পর্কে তিনি তখন বলেছিলেন, ‘‘এই বিয়েতে দু’জন নন, তিন জন আছেন। তাই ভিড় একটু বেশিই।’’
১৯৯৬ সালে চার্লস ও ডায়না বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কিন্তু সেই সময় আইনজীবীর পরামর্শে চার্লস জানান, ফের বিয়ে করার কোনও ইচ্ছে নেই তাঁর। পেনি জানিয়েছেন, চার্লসের এই মন্তব্যে বেশ ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ক্যামিলা। যদিও তাঁদের মেলামেশায় কোনও বাধা পড়েনি তাতে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিয়েতেই গড়িয়েছে তাঁদের প্রেম।