একটা মানুষ সমান গর্ত। আর তার মধ্যে দাঁড়িয়ে এক যুবতী। চোখ-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু পালিয়ে বাঁচারও জো নেই। কারণ ওই বিশাল গর্তটিকে ঘিরে রয়েছে একদল লোক। এর পরেই আশপাশ থেকে পাথর কুড়িয়ে নিল দলের কয়েক জন। এ বার শুরু হল মেয়েটিকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি পাথর ছোড়া। আর তা শুরু হতেই বাঁচার জন্য মেয়েটির করুণ আর্তিও শোনা যায়। মেয়েটির আর্তিকে উপেক্ষা করেই ক্রমশ বাড়তে থাকল পাথরবৃষ্টি। সময় যতই গড়িয়েছে, মেয়েটির আর্ত চিৎকারও ততই বেড়েছে। আর এমন শাস্তির দৃশ্য নিজেদের মোবাইলে রেকর্ড করতে ব্যস্ত ওই ভিড়টার একটা অংশ।
মনে হতে পারে, এটা কোনও ছবির দৃশ্য। তা নয়। সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্তানের ফিরোজকোহ-র তালিবান অধ্যুষিত এলাকায়।
আর ওই ঘটনাই একটি গ্রাফিক ভিডিও-র মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক-সহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটি সম্প্রচার করছে আফগানিস্তানের নানা খবরের চ্যানেলগুলিও।
কেন ওই ভাবে হত্যা করা হল মেয়েটিকে? সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মেয়েটির নাম রোখসাহানা। বয়স ১৯ থেকে ২১-এর মধ্যে। তাঁর অমতেই বাড়ির লোকজন বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। ফলে নিজের বয়সি অন্য এক পুরুষের সঙ্গে পালান রোখসাহানা। তালিবানের রোষনজরে পড়েন তিনি। তাই ইনসাফ করতেই ২৫ অক্টোবর ঘোর-এর প্রাদেশিক রাজধানী ফিরোজকোহ-র কাছে এক জায়গায় বিশাল একটা গর্ত খুঁড়ে তাতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রোখসাহানাকে। এর পর পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাঁকে।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর সীমা জয়েন্দা জানান, রোখসাহানাকে হত্যার পিছনে রয়েছে তালিবানের হাত। তা ছাড়াও ছিলেন বেশ কিছু স্থানীয় ধর্মীয় নেতা। তিনি আরও জানান, এমন ঘটনা এই অঞ্চলে প্রথম। কিন্তু শেষ নয়। দেশে মহিলাদের সঙ্গে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে। তবে ঘোর-এ এ ধরনের সমস্যা একটু বেশিই। যাঁর সঙ্গে মেয়েটি পালিয়েছিলেন, তাঁকে তো পাথর ছুড়ে মারা হয়নি।
তবে মহিলাদের প্রতি এমন ঘটনার নজির আগেও রয়েছে। চলতি বছরেই ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর অপরাধে এক মহিলাকে পিটিয়ে মেরেছিল উত্তেজিত জনতা। খোদ রাজধানীরই ঘটনা।