লড়াকু: খুশি জাহানতাব। ছবি: এপি।
সংসার বলতে অশিক্ষিত স্বামী আর পাঁচ বছরেরও কমবয়সি তিন মেয়ে। ছোটটার বয়স দু’মাস। তবু কলেজে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
মধ্য আফগানিস্তানে গ্রামের একমাত্র স্কুলটিতে চাকরির জন্য হাতে থাকা হাইস্কুলের ডিগ্রিটাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তিনি মেয়ে কোলে নিয়ে এসেছিলেন নিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। কে জানত, সেখানে জাহানতাব আহমদির স্বপ্নপূরণের পথ খুলে যাবে! সৌজন্যে ফেসবুক!
দু’মাসের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে মেঝেয় বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন তরুণী— ফেসবুকের কল্যাণে ওই ছবিটাই বদলে দিল জাহানতাবের জীবন। ছবিটি পোস্ট করে দেন এক শিক্ষক। আরও অনেকের মতো সেটা চোখে পড়ে যায় জাহরা ইয়াগনার। একটি অসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ত্রী জাহরা দ্রুত দ্বারস্থ হন প্রেসিডেন্ট আসরফ ঘানির অন্যতম উপদেষ্টা ফারখুন্দা জাহরা নাদেরি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ দানিশের। আশ্বাস মিলতেই যোগাযোগ করেন জাহানতাবের সঙ্গে। এঁদের উদ্যোগেই কাবুলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন জাহানতাব। সেখানে তাঁর পড়ার খরচ জোগাবেন নাদেরি এবং তাঁর পরিবারের কাবুলে থাকার খরচ বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন স্বয়ং ভাইস প্রেসিডেন্ট। এঁদের সকলের কথায়, ‘‘জাহানতাব আমাদের অনুপ্রেরণা।’’
আরও পড়ুন: চাপের মুখেও তদন্তে নারাজ ইজরায়েল
আর জাহানতাবের স্বামী, মুসা মহম্মদি? স্ত্রী-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকে বলছেন, রক্ষণশীল আফগান সমাজে মুসা খুবই ব্যতিক্রমী। নিজে অশিক্ষিত হলেও চান, স্ত্রী লেখাপড়া শিখুন। মুসার কথায়, ‘‘আমি চাই না, আমার সন্তানরা এ রকম জীবন কাটাক। আমি রাস্তায় কোনও চিহ্ন দেখে পড়তে পারি না। ওষুধের নাম পড়তে পারি না!’’
জাহানতাব নিজে কী বলছেন? ‘‘আমি লেখাপড়া শিখতে চাই যাতে আমি আমার গ্রামকে বদলাতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে আগে চাই, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক।’’ এত আশার মধ্যেও আশঙ্কার কাঁটা। এক দিকে তালিবান, অন্য দিকে কট্টর মৌলবিরা। দুই পক্ষই নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে। জাহানতাব অবশ্য এ সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কে আর পিছনে তাকাতে চায়!