Russia Ukraine War

‘মুখরক্ষা নয়, অস্তিত্বরক্ষার লড়াই!’ ইউক্রেন নিয়ে কোনও চুক্তি পুতিন কি মানবেন? বৈঠকের আগে উদ্বেগ বাড়ছে আমেরিকার

ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, উপরে উপরে যা-ই দাবি করুন না কেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুতিনকে নিয়ে ক্ষোভ বেড়েছে ট্রাম্পের। বিভিন্ন একান্ত বৈঠকে পুতিনের সম্পর্কে নানা কুকথা বলতে শোনা গিয়েছে ট্রাম্পকে। এমনকি, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও ক্রেমলিনকে নিয়ে হতাশ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৩৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) ভ্লাদিমির পুতিন, ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ইউক্রেন-প্রশ্নে কি নতিস্বীকার করবেন পুতিন? শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়া-আমেরিকা বৈঠকের আগে জল্পনা বাড়ছে। বিভিন্ন মহলের বিশ্লেষণ, এই যুদ্ধ আদতে পুতিনের কাছে মুখরক্ষা নয়, বরং অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। আর সে জন্যই শুরু হয়েছে জল্পনা। ফলে উদ্বেগ বেড়েছে আমেরিকারও।

Advertisement

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাঁর— অতীতে বার বার এমনটাই দাবি করে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গত ছ’বছরে দুই নেতার বিশেষ দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তাই শুক্রবারের বৈঠকের মাসকয়েক আগে থেকেই নাকি প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প, এমনটাই দাবি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর। ইউরোপ এবং হোয়াইট হাউসের সহযোগীদের কাছ থেকে নাকি রুশ প্রতিপক্ষের বিষয়ে খবরাখবর নিতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সিএনএন সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাশিয়ার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করতে আরও তৎপর হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।

তবে ট্রাম্প ‘আত্মবিশ্বাসী’ যে, তিনি পুতিনের উদ্দেশ্য শুরু থেকেই বুঝতে পারবেন। অন্তত বাইরে থেকে এখনও এমনটাই হাবভাব নিয়ে চলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার তাঁকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, দু’পক্ষের কোনও চুক্তিতে পৌঁছোনো সম্ভব কি না, তা নাকি বৈঠক শুরুর দু’মিনিটের মাথাতেই বুঝে যাবেন তিনি! তবে আগে থেকে পুতিনের উদ্দেশ্য বোঝা কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়! মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, পুতিনের আস্থাভাজনদের বৃত্তটি খুবই ক্ষুদ্র। ফলে তিনি কখন কার পরামর্শে চলেন, তা স্পষ্ট নয়। পুতিনের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থাগুলিকে। তাবড় গোয়েন্দারাও ক্রেমলিনকে প্রায় দুর্ভেদ্য বলে মনে করেন। ফলে বাইরে তা প্রকাশ না করলেও এ -হেন পুতিনকে নিয়ে খানিক ‘উদ্বিগ্ন’ ট্রাম্পও। সিএনএন-এর দাবি, এত বছরে পুতিন কতটা বদলে গিয়েছেন, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠবৃত্তে প্রশ্নও করতে শোনা গিয়েছে ট্রাম্পকে।

Advertisement

ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, উপরে উপরে যা-ই দাবি করুন না কেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুতিনকে নিয়ে ক্ষোভ বেড়েছে ট্রাম্পের। বিভিন্ন একান্ত বৈঠকে পুতিনের সম্পর্কে নানা কুকথা বলতে শোনা গিয়েছে ট্রাম্পকে। এমনকি, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও ক্রেমলিনকে নিয়ে হতাশ। এতেই স্পষ্ট যে, পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমশ বদলাচ্ছে। তা ছা়ড়া, যুদ্ধের চতুর্থ বছরে ইউক্রেন জয়ের জন্য আরও দৃঢ়সংকল্প হয়েছেন পুতিন। ফলে অতীতে হলে পুতিনের সঙ্গে কোনও চুক্তিতে পৌঁছোনোর জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হত, তার চেয়ে আরও বেশি কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে ট্রাম্পকে। মার্কিন প্রশাসনের প্রাক্তন শীর্ষ আধিকারিক অ্যাঞ্জেলা স্টেন্টের কথায়, ‘‘পুতিন মনে করেন, রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে জয়ী না হয়, তা হলে তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না। আর সে কারণেই গত কয়েক বছরে ইউক্রেন নিয়ে আরও দৃঢ়সংকল্প হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পশ্চিমি দুনিয়ার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টেছে।’’ আর পুতিনের এই মনোভাব নিয়েই চিন্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অনেকেই মনে করছেন, পুতিন ট্রাম্পকে এমন একটি চুক্তিতে প্রলুব্ধ করবেন, যাতে উল্টে সুবিধা হবে রাশিয়ারই।

মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের এক সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবারের আগে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেকের মনে হচ্ছে, ক্রেমলিন হোয়াইট হাউসকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। কারণ, পুতিনের সঙ্গে আমেরিকার মাটিতে দেখা করছেন ট্রাম্প, তা-ও আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির উপস্থিতি ছাড়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক কর্তা বলেন, ‘‘যদি রাশিয়ার সব দাবিদাওয়া পূরণ হয়, তা হলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু তা-ই যদি হয়, তা হলে এটি কোনও চুক্তি হবে না, বরং হবে আত্মসমর্পণ।” তবুও, অনেকের মতে, যে কোনও চুক্তি করায় ট্রাম্পের জুড়ি মেলা ভার। তাই কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে আমেরিকা।

অবশ্য এ বিষয়ে আগে থেকেই ট্রাম্পকে সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছেন জ়েলেনস্কি। তিনিও মনে করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর সঙ্গে ‘প্রতারণা’-র চেষ্টা করবেন পুতিন। সোমবারই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পুতিন মোটেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন না। জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘পুতিন আমেরিকার সঙ্গে বৈঠককে কেবল তাঁর ব্যক্তিগত বিজয় হিসাবে দেখাতে চান। তার পরেও তিনি আগের মতোই ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাবেন।’’ আর সে কারণেই উদ্বেগ বাড়ছে ট্রাম্প প্রশাসনের। রাশিয়ায় নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফলের কথায়, ‘‘আজকের পুতিন অতীতের তুলনায় অনেক বেশি আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি কোনও রকম লেনদেনে বিশ্বাসী নন, যেমনটি পশ্চিমি নেতারা অতীতে ভেবেছিলেন। পুতিন বরং সাম্রাজ্যবাদী চেতনায় বেশি অনুপ্রাণিত। আর সে কারণেই এ ধরনের মানসিকতার অধিকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় বসা কঠিন!’’ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবারের বৈঠকে কী হয়, সে দিকে তাকিয়ে বিশ্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement