স্নায়ুর লড়াই শেষ, তাইল্যান্ডে উদ্ধার সব খেলোয়াড়ই

চিকিৎসকদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সকলের অবস্থাই স্থিতিশীল। তবে তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্যাঙ্কক শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

এই বারো খুদে ফুটবলারই আটকে ছিল গুহায়। ফাইল চিত্র

শেষ হল অভিযান। থাম লুয়াং গুহা থেকে বার করে আনা হল ফুটবল দলটির বাকি পাঁচ সদস্যকেও।

Advertisement

প্রথম ধাপে বেরোয় তিন কিশোর। দ্বিতীয় ধাপে, বাকি ফুটবলার ও কোচ। তাঁদের সঙ্গেই বেরোন তাইল্যান্ডের নেভি সিলের তিন জন ও চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিস। গোটা অভিযানে সঙ্গে ছিলেন এই অস্ট্রেলীয় ডাক্তার।

চিকিৎসকদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সকলের অবস্থাই স্থিতিশীল। তবে তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। গুহার গর্ভ থেকে মুখ অবধি (৪ কিলোমিটার পথ) পৌঁছতে কখনও সাঁতরাতে হয়েছে তো কখনও স্কুবা ডাইভিং করতে হয়েছে। কোথাও হেঁটে তো কোথাও হামাগুড়ি দিয়ে পেরোতে হয়েছে বাধা। বাচ্চারা যাতে আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে, তাই সামান্য মাত্রার সেডেটিভ (স্নায়ু শান্ত রাখার ওষুধ) দিয়েছিলেন অ্যানাসথেটিস্ট রিচার্ড হ্যারিস। গায়ে পরানো হয়েছিল ওয়েটস্যুট। মুখ সম্পূর্ণ মুখোশে ঢাকা। এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে শ্বাস নিতে কোনও রকম কষ্ট না হয় ছেলেদের। ১৯ জন দক্ষ ডুবুরিকে নামানো হয়েছিল গুহায়। গোটা রাস্তায় দড়ি দিয়ে পথ নির্দেশ করা। প্রতিটি বাচ্চার সামনে এক জন ডুবুরি। পিছনে এক জন ডুবুরি। সামনের জনের হাতে ধরা ছিল বাচ্চাটির অক্সিজেন সিলিন্ডার।

Advertisement

গত কাল রাত থেকে ফের শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। তখনও যে হেতু পাঁচ জন গুহার ভিতরে, নতুন করে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কিন্তু অপেক্ষা করারও উপায় ছিল না। তাই সকালে বৃষ্টি একটু ধরতেই ১০টা নাগাদ অভিযান শুরু হয়ে যায়। উদ্ধারকারী দলের প্রধান নারোঙ্গসাক ওসোত্তানাকর্ন বলেন, ‘‘গুহার ভিতরে জলস্তর খুব বেশি বাড়েনি। ফলে দ্রুত অভিযান শেষ করতে নতুন করে সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’ তিনি জানান, আজ ভোরে নিজের খুদে ডুবাজাহাজটি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিল্পপতি তথা ইঞ্জিনিয়ার এলন মাস্ক। কিন্তু তাঁর যন্ত্রটিকে খারিজ করে দেয় নেভি সিল। নারোঙ্গসাক বলেন, ‘‘ওঁর ডুবোজাহাজ একেবারেই বাস্তবসম্মত নয়। তাই কাজে লাগানো যায়নি।’’

গত দু’দিনে গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া আট জনের মধ্যে দু’জনের নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। তবে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভয়ের কিছু নেই, সকলেই চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম সকলেরই নিউমোনিয়া ধরা পড়বে। কিন্তু বেশির ভাগেরই তেমন কিছু ধরা পড়েনি।’’ সামান্য সর্দিকাশি, হাল্কা জ্বর, হাতে-পায়ে চোট বাদ দিয়ে তেমন কিছু নেই।

হাসপাতালে কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে বাচ্চাদের। গত কাল রাতে কাচের জানলার বাইরে থেকে বাড়ির লোকজনকে দেখতে দেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণের ভয়ে কাউকে সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। শরীরে কোনও রকম সংক্রমণ রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়ে গেলে পরিবারের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করতে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রেও অবশ্য তাঁদের হাসপাতালের বিশেষ পোশাক, মুখোশ পরে ঢুকতে হবে। তবে উদ্ধারকারী দলকে ছেলেরা জানিয়েছে, গুহায় কোনও বাদুড় জাতীয় প্রাণী ছিল না। ফলে রোগ সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। তবু সাত দিন হাসপাতালেই রাখা হবে বাচ্চাদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়েছে, ‘‘সকলেরই বয়স খুব কম। তাই সহজে পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে পেরেছে। সকলেই খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে ওরা খুশি।’’ চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন, এত দিন গুহার অন্ধকারে, জলের মধ্যে ঠান্ডায় ছিল ওরা। মা-বাবাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে ওরা অদ্ভুত স্বতঃস্ফূর্ত রয়েছে। বলেন, ‘‘বারবার নানা ধরনের খাবার খেতে চাইছে। কিন্তু এত দিনের ধকল, তাই সহজপাচ্য খাবার দেওয়া হচ্ছে। নিজেরা বসে খেতে পারছে। আশঙ্কা করার মতো কিছু নেই।’’

কোয়ারান্টাইনের মধ্যেই বিশ্বকাপের শেষ ক’টা ম্যাচ দেখতে চেয়েছে ছেলেরা। কিন্তু এখনই সেই ছাড়পত্র দিতে রাজি নন মনোবিদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন