International

চিনা দূতাবাস ঘিরে বালোচ বিক্ষোভ, মোদীর জয়ধ্বনি লন্ডনে, অস্বস্তিতে বেজিং

বালুচিস্তানে ভারত অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করলে চিনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে বেজিং। সরাসরি নয়। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে। ভারতকে তার জবাব দিতে হল না। বালোচ জনগোষ্ঠীই উত্তাল হল চিন বিরোধী বিক্ষোভে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ১৯:১৫
Share:

পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে চিন। অভিযোগ উঠল বালোচ বিক্ষোভ থেকে।

বালুচিস্তানে ভারত অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করলে চিনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে বেজিং। সরাসরি নয়। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে। ভারতকে তার জবাব দিতে হল না। বালোচ জনগোষ্ঠীই উত্তাল হল চিন বিরোধী বিক্ষোভে। লন্ডনে চিনা দূতাবাসের বাইরে তুমুল বিক্ষোভ হল সোমবার। বালুচিস্তান ছেড়ে অবিলম্বে বেরিয়ে যাক চিন, স্লোগান তুললেন বিক্ষোভকারীরা।

Advertisement

স্বাধীনতার দাবিতে বালুচিস্তান যত অশান্ত হচ্ছে, চিনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ততই বাড়ছে। চিন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে চিনের জিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করেছে, সেই করিডরের অনেকটা অংশই গিয়েছে বালুচিস্তানের মধ্যে দিয়ে। ফলে, ৪৬ হাজার কোটি ডলার খরচে তৈরি অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে চিন। দু’দেশের সেনা করিডরের নিরাপত্তায় চূড়ান্ত তৎপর। কিন্তু বালুচিস্তানে উত্তেজনা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে শুধু সেনা মোতায়েন করে যে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তা ইসলামাবাদ যেমন জানে, তেমন বেজিংও জানে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা ভারত সরকার বালুচিস্তানে পাক দমননীতির বিরোধিতায় সরব হওয়ায়, পাকিস্তান ও চিন দাবি করছে, ভারতই বালুচিস্তানে নাশকতা ঘটাচ্ছে। বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের দায়ও ভারতের উপরেই চাপিয়েছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে চিনও ভারতের উপরে চাপ বাড়াতে চাইছে। সরাসরি চিনের সরকার এই বিতর্কে এখনও জড়ায়নি। কিন্তু ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে ভারতকে। চিনা কূটনৈতিক মহলের একাংশ ব্যক্তিগত মতামত দেওয়ার ঢঙে বলতে শুরু করেছেন, বালুচিস্তানে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে ভারতের বিপদই হবে। ওই কূটনীতিকরা বলছেন, অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চিন বদ্ধপরিকর। তাই বালোচ বিক্ষোভে ভারতের ইন্ধন যদি ওই করিডরকে বিপন্ন করে তোলে, তা হলে বাধ্য হয়ে চিনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। চিন হস্তক্ষেপ করলে তার পরিণাম ভারতের পক্ষে সুখকর হবে না বলেও চিনা বিশেষজ্ঞেরা মন্তব্য করতে শুরু করেছেন।

Advertisement

কূটনৈতিক মহলকে দিয়ে এই সব মন্তব্য করিয়ে চিন যে আসলে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছে, তা নয়াদিল্লির কাছে স্পষ্ট। ভারত কোনও দেশে নাশকতা চালানোর নীতিতে বিশ্বাস করে না বলে নয়াদিল্লি আগেই স্পষ্ট করে জানিয়েছে। তাই চিনা কূটনীতিকদের মন্তব্যে ভারত সরকার কোনও মন্তব্য এখনও করেনি।

ভারত মন্তব্য না করলেও বালোচ জনগোষ্ঠী কিন্তু চিনের ভূমিকাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। চিন এবং পাকিস্তান হাত মিলিয়ে তাদের স্বাধীনতার অধিকারকে পিষে দিতে চাইছে বলে বালোচরা এখন অভিযোগ করছেন। বিক্ষোভের আঁচ আর বালুচিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। লন্ডনের চিনা দূতাবাসেও আছড়ে পড়েছে বালোচ বিক্ষোভের ঢেউ।

সোমবার লন্ডনে চিনা দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভে সামিল হন প্রবাসী বালোচ জনগোষ্ঠীর লোকজন। বালুচিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক করিডরের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে সেই জমায়েত থেকে। ‘হ্যায় হক হামারা আজাদি’— বার বার স্লোগান উঠতে থাকে মিছিল থেকে। ‘চিন দূর হঠো’, ‘চিন তুমি বালুচিস্তান থেকে হাত হঠাও’, ‘বালোচ গণহত্যা বন্ধ কর’— এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে লন্ডন। নুরদিন মেঙ্গল নামে এক বালোচ বিক্ষোভকারী বললেন, ‘‘বালুচিস্তানের মানুষের সম্মতি ছাড়া সেখানে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলার কোনও অধিকার চিনের নেই। চিন এবং পাকিস্তান হাত মিলিয়ে বালুচিস্তানের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: চড়া আলোয় আতঙ্কিত কিম, মার্কিন ঘাঁটিতে নির্দয় আঘাত হানার হুমকি

এর আগে জার্মানির লিপজিগে পাকিস্তান বিরোধী বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন বালোচরা। সোমবার লন্ডনেও বালোচরা বিক্ষোভ করলেন। সেই বিক্ষোভ চিনা দূতাবাসের বাইরে হওয়ায়, পাকিস্তানের মতো অস্বস্তিতে পড়ল চিনও। এ দিনের বালোচ জমায়েত থেকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে স্লোগান উঠেছে। বালুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে এ বার পাকিস্তানের পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল উঠছে চিনের দিকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন