Sheikh Hasina Verdict

ফাঁসি ঘোষণার পরই ভারতের থেকে হাসিনাদের ফেরত চাইল ইউনূস সরকার! উল্লেখ করল হাসিনা জমানার চুক্তির কথাই

হিংসায় উস্কানি দেওয়া, হত্যার নির্দেশ এবং দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা— এই তিন অভিযোগে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইবুনাল। সঙ্গে আসাদুজ্জামানকে একই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৫
Share:

(বাঁ দিক থেকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। শুধু একা হাসিনা নন, একই সাজা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানেরও। সাজা ঘোষণার পরই এ বার তাঁদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করল সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সাজাপ্রাপ্ত দুই ‘পলাতককে’ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন করা হল। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে মনে করাল প্রত্যর্পণ চুক্তির কথাও!

Advertisement

হিংসায় উস্কানি দেওয়া, হত্যার নির্দেশ এবং দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা— এই তিন অভিযোগে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইবুনাল। সঙ্গে আসাদুজ্জামানকে একই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা দু’জনেই ভারতে রয়েছেন। যদি তাঁদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয়, তবে দু’জনকেই বাংলাদেশে ফিরতে হবে। প্রশ্ন উঠছে, মোদী সরকার কি আদৌ হাসিনাদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে? তবে তার মধ্যেই মহম্মুদ ইউনূস প্রশাসন হাসিনাদের প্রত্যপর্ণ নিয়ে ভারত সরকারের আবেদন করল। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে বিষয়টি উত্থাপিত করে।

বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের (হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) দ্বিতীয় কোনও দেশ আশ্রয় দেয়, তবে তা ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ’ হবে, যা ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল! বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।’’ বিবৃতির শেষে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ভারত সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা। বলা হয়, ‘দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে’ এটি ভারতের অবশ্যই পালন করা দায়িত্ব।

Advertisement

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতি।

বিদেশ মন্ত্রক ছাড়াও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারও বিবৃতি জারি করে হাসিনাদের সাজার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছে ইউনূস প্রশাসন। পাশাপাশি, দেশের সকলকে শান্ত, সংযত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আগে, রবিবার থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দফায় দফায় অশান্তির খবর আসছে। ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ি, বাস, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। সোমবারও একই ছবি দেখা যায়। তবে শুধু বিক্ষোভ নয়, রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের কোথাও কোথাও উচ্ছ্বাসের ছবিও দেখা গিয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের সরকার জনগণকে সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইউনূস সরকার আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যে কোনও ধরণের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা কঠোর হাতে দমন করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হাসিনাই। ওই চুক্তি অনুযায়ী আদালতের রায়ে প্রত্যর্পণ করানোর মতো অপরাধ করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এক দেশ অপর দেশের হাতে তুলে দেবে। ২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে চুক্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়, কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই তাঁকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের প্রমাণস্বরূপ কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে হবে না। হাসিনার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সংশোধিত চুক্তি অনুসারেই তাঁকে প্রত্যর্পণ করার আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement