বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এত বড় কেলেঙ্কারি সরকার জানল এত পরে!

অর্থনীতিতে গ্রেশাম’স ল’ বলে, ‘ব্যাড মানি ড্রাইভ্‌স গুড মানি, আউট অব সার্কুলেশন।’ এই বিপদটা কম-বেশি সব দেশেই। চুরি-ডাকাতি-দুর্নীতি আর জালিয়াতির টাকা ধাক্কা দিচ্ছে সাদা টাকাকে। যেখানে যত বেশি কালো টাকার উৎপাত, সেখানকার অর্থনীতি তত বেশি ভঙ্গুর। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা বড় রকমের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ১২:২৯
Share:

অর্থনীতিতে গ্রেশাম’স ল’ বলে, ‘ব্যাড মানি ড্রাইভ্‌স গুড মানি, আউট অব সার্কুলেশন।’

Advertisement

এই বিপদটা কম-বেশি সব দেশেই। চুরি-ডাকাতি-দুর্নীতি আর জালিয়াতির টাকা ধাক্কা দিচ্ছে সাদা টাকাকে। যেখানে যত বেশি কালো টাকার উৎপাত, সেখানকার অর্থনীতি তত বেশি ভঙ্গুর। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা বড় রকমের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের বিপন্নতারও অন্যতম কারণ এটাই। বন্যার জলের মতো ঢুকছে পেট্রো-ডলার। সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদীরা যে টাকায় ভাসছে, তার উৎস কারও জানা নেই। ওই সবই খারাপ টাকা। নিরাপত্তা বাহিনীর সাধ্য নেই ওই টাকার হদিস পাওয়ার। ইনটেলিজেন্সেরও নাগালের বাইরে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এখন সাইবার জালিয়াতি।

Advertisement

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মানে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে এমন ঘটনা ঘটেছে। যারা কাজটা করেছে, তারা যে এ লাইনে বেশ ‘পাকা খেলোয়াড়’, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আটঘাট বেঁধে সূক্ষ্ম কারসাজিতে তারা কাজ সেরেছে। ব্যাঙ্কের অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা পর্যন্ত টের পাননি। ব্যাঙ্কের গভর্নর আতিউর রহমানও ছিলেন অন্ধকারে। তিনি যখন জানলেন, তখন সব শেষ। ব্যাঙ্কের মার্কিন অ্যাকাউন্ট থেকে খোওয়া গিয়েছে ৮ কোটি ১০ লক্ষ ডলার। এত বড় অঙ্কের সাইবার চুরি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে কেন, কোনও ব্যাঙ্কেই ঘটেনি।

সরকারও ঘটনাটা জেনেছে অনেক পরে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিথ অভিযোগ করেছেন, এক মাস আগে কান্ডটা ঘটল, অথচ তাঁকে জানানোই হল না। তিনি জানতে পারলেন অনেক অনেক দেরিতে। এটা অবশ্যই গভর্নর রহমানের অমার্জনীয় অপরাধ। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক মানে সরকারের ব্যাঙ্ক। শুধু তাই নয়, এটা ‘ব্যাঙ্ক অব অল ব্যাঙ্কার্স’। অনেকটা ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো। সেখানে একটা মারাত্মক চুরির পর কর্মকর্তারা চুপ করে থাকবেন, সরকারকে কিছু জানানো হবে না, সেটা কী ভাবে হয়! কোনও বাড়িতে সামান্য চুরি হলেও তো পুলিশকে জানানো হয়। তার মানে তো সরকারি ভাবে চুরির ঘটনা নথিভুক্ত করা। এখানে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় এত বড় জালিয়াতি সরকার জানতেই পারল না!

রহমান সাহেব ‘গভর্নর’ পদে ইস্তফা দিয়ে পার পেতে চেয়েছেন। তা হয় না। দায়িত্ব স্বীকার করলেও অব্যাহতি মেলে না। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ওই পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভবই। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সিস্টেমে এত বড় ফাঁকফোঁকর রয়েছে, গভর্নর সেটা জানতেন না!

ব্যাঙ্কের কর্ণধারই যদি না জানেন, কে জানবেন? দু’জন ডেপুটি গভর্নরকেও পদচ্যুত করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, টাকাটা ফিলিপিন্সে চলে গিয়েছে। সে যে দেশেই যাক, সেটা যে ঘুর পথে ফের বাংলাদেশেই ঢুকবে না, সেই গ্যারান্টিটা কে দেবেন? বাংলাদেশের কোনও পাকা সাইবার হ্যাকারের সাহায্য ছাড়া ওই কাজটা হতেই পারে না। ঠিকঠাক তদন্ত হলে অপরাধীরা ধরা পড়বেই। সময় হয়তো একটি বেশি লাগতে পারে।

ব্যাঙ্কের টাকা কালো রাস্তায় ছিটকে যাওয়া আর ঘরের মেয়ের নিষিদ্ধ পল্লিতে আশ্রয় নেওয়াটা একই কথা। টাকাটা তখনই ভাল থাকে না, খারাপ হয়ে যায়। আর সেই টাকাটা যে দেশে ঢুকবে, সেই দেশেরই ক্ষতি। অর্থনীতির দুর্গম রাস্তা বেয়ে এখন ওপরে উঠতে চাইছে বাংলাদেশ। গরীব দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়াটাই তাদের পরীক্ষা। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কেই যদি খুব গভীর একটা গহ্বর তৈরি হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এগোনোর পথটাই তো পিচ্ছিল হয়ে যাবে।

রহমান সাহেব ২০০৯ সাল থেকে গভর্নর। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় ব্যাঙ্কের নাড়ি-নক্ষত্র তাঁর জানা উচিত ছিল। তিনি কৃষি ও মহিলা উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর সময় বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এটাও মানতে হয়, এত বড় সাইবার চুরির সাক্ষীও তিনি! যা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় কল্পনাতীত। প্রাক্তন অর্থ সচিব ফজলে কবীর নতুন গভর্নর হয়েছেন। তাঁর প্রধান কাজটাই এখন উধাও হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার করে আনা।

এখনও সময় রয়েছে, পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আগে খারাপ টাকাটাকে ভাল করে নেওয়ার। বাঙালির কিছুই অসাধ্য নয়!

আরও পড়ুন...

বিদেশ থেকে চুরি গেল বাংলাদেশের ১০০ মিলিয়ন ডলার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন