বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার তাঁকে নিয়ে মামলায় রায় জানাবে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল। — ফাইল চিত্র।
সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করবে বাংলাদেশের আদালত। গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময়ে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ (জুলাই আন্দোলনের সময়ে হত্যাকাণ্ড)-এর অভিযোগ রয়েছে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সোমবার ওই মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে। অন্য দিকে, আওয়ামী লীগ গোটা বাংলাদেশকে স্তব্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। রবি এবং সোমবার ‘সম্পূর্ণ লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে তারা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ধরপাকড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে।
‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর মামলায় হাসিনা ছাড়াও অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। প্রাক্তন পুলিশকর্তা এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন। এই মামলায় মোট ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষীদের তালিকায় রয়েছেন পুলিশের রবার বুলেটে বিদ্ধ হয়ে মৃত আবু সাঈদের পিতাও। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মুহাম্মদ গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার রায় জানাবে। এই মামলার শুনানি পর্বের শেষে সমাপ্তিসূচক বক্তব্যে (ক্লোজ়িং স্টেটমেন্টে) হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) দাবি জানান বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। অন্য দিকে তিন অভিযুক্তেরই রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁদের নির্দোষ দাবি করে বেকসুর খালাসের আর্জি জানিয়েছেন। ফলে সোমবার আদালত হাসিনাকে নিয়ে কী রায় দেয়, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের।
রবিবার ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে সরকারি আইজীবী গাজী মোনাওয়ার হুসেন তামীম জানান, এই মামলার রায় এজলাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। তিনি বলেন, “আগামিকালের রায়ের যে অংশটুকু ট্রাইব্যুনাল পড়ে শোনাবেন, সেই অংশটুকু ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।” আইনজীবী আরও জানান, বাংলাদেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম থেকে তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। তার মাধ্যমে অন্য সংবাদমাধ্যমেও রায়ের ওই অংশ সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে।
হাসিনাকে নিয়ে আদালতের রায়ের আগে থেকেই বাংলাদেশকে স্তব্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। রবিবার এবং সোমবার ‘সম্পূর্ণ লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে তারা। কর্মসূচির ঘোষিত লক্ষ্য, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ‘জনবিরোধী’ কার্যকলাপের প্রতিবাদ করা। তবে হাসিনাকে নিয়ে রায়ের প্রতিবাদকেও এই কর্মসূচির অন্যতম নেপথ্য কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের আদালত হাসিনাকে নিয়ে রায়ের দিন ঘোষণা করেছিল। ওই দিনও ঢাকায় ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছিল হাসিনার দল।
বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আগামী বছর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন তাদের প্রতিদ্বন্দিতা করার সম্ভাবনাও নেই, তা-ও ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, কোনও দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত থাকার অর্থ সব কিছুই স্থগিত থাকবে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচির আগেও ধরপাক়ড় চালিয়েছিল বাংলাদেশের পুলিশ। এ বারও শুরু হয়ে গিয়েছে ধরপাকড়।
কেউ কোথায় গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ঢাকা পুলিশ। কোথাও সাধারণ মানুষ বা পুলিশের উপর ককটেল হামলা বা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশপ্রধান শেখ মুহাম্মদ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, “যাঁরা মানুষ এবং পুলিশ সদস্যদের উপর ককটেল হামলা এবং যানবাহনে আগুন দেবেন, আইনসম্মত ভাবেই তাঁদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একাধিক পুলিশকর্তা ‘প্রথম আলো’কে জানান, সরকারি ভবন, ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলা বা অগ্নিসংযোগের চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করতে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
রবিবারও ঢাকায় আওয়ামী লীগের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায়া আওয়ামী লীগ একটি ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করেছিল। ওই কর্মসূচির জন্যই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি সংবাদসংস্থা ‘বাসস’ সে দেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ জুড়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ এবং অন্য বাহিনী।