বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পরে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা ব্রিটেনে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছেন! সম্প্রতি এমনটাই আভাস মিলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক অন্তর্তদন্তে। হাসিনা বাংলাদেশে থাকাকালীন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা ব্রিটেনে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি তৈরি করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই সম্পত্তিগুলি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে তদন্ত চলছে বাংলাদেশে। ব্রিটেনের তদন্তকারী সংস্থা ‘ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি’-ও (এনসিএ) বেশ কয়েক জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এরই মধ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের বিষয়ে নতুন তথ্য উঠে এল তদন্তমূলক প্রতিবেদনে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এবং আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’-এর অন্তর্তদন্তে দাবি করা হচ্ছে, হাসিনা-ঘনিষ্ঠেরা ব্রিটেনে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তর করছেন। গত বছরে এমন অন্তত ২০টি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে ব্রিটেনের জমি রেজিস্ট্রি দফতরে। এগুলি সবই বাংলাদেশের প্রশাসনের তদন্তের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের নামে রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে ওই অন্তর্তদন্তে। মূলত সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক এবং হস্তান্তরের উদ্দেশ্যেই এই আবেদনগুলি করা হয়েছে।
গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ছাত্রজনতা আন্দোলনের জেরে অগস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও সময়ের উল্লেখ নেই। তবে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর পর থেকে কয়েক জন বাংলাদেশি ব্রিটেনে নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের চেষ্টা করেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে ওই প্রতিবেদনে।
এই ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে বলেন, ‘‘আমরা সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টার বিষয়টি জানি। তাই ব্রিটেন সরকারের কাছে অনুরোধ, যাতে এই ধরনের সম্পত্তিকে আরও বেশি করে বাজেয়াপ্ত করা হয়।” বস্তুত, গত মে মাসেই সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছিল, হাসিনার তৎকালীন উপদেষ্টা সলমান এফ রহমানের পরিবারের ৯ কোটি পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি) সম্পত্তি ‘ফ্রিজ়’ করেছে ব্রিটেনের গুরুতর এবং সংগঠিত অপরাধদমন সংস্থা।
ওই ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে হাসিনা জমানার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ডের (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা) সম্পত্তি ‘ফ্রিজ়’ করে ব্রিটেনের সংস্থা। হাসিনার আমলে সাইফুজ্জামান বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছ। এর মধ্যে শুধু ব্রিটেনেই ৩০০টির বেশি সম্পত্তি রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
বস্তুত, এর আগে হাসিনার দুই বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিকের লন্ডনের সম্পত্তি ঘিরেও বিতর্ক দানা বাঁধে। বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন হাসিনার বোনঝি টিউলিপও। যদিও এই ধরনের অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।