‘সুন্দরী হলেই বুদ্ধিহীন হবে, এ ভাবনাটা বদলানো দরকার’, বিলেত-সুন্দরী হয়ে বললেন বঙ্গতনয়া

২৩ বছরের ভাষা মুখোপাধ্যায় কিন্তু আনন্দে গা ভাসানোর সময়ই পাননি। বৃহস্পতিবার রাতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা জিতে সে দিনই ভোর চারটের ট্রেন ধরেছেন।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫১
Share:

ভাষা মুখোপাধ্যায়

স্কুলে তাঁকে এক সময় অনেক খোঁটা শুনতে হয়েছে। ঢাউস চশমা আর এবড়োখেবড়ো দাঁতের জন্য নাম হয়ে গিয়েছিল ‘আগলি বিটি’। সেই বাঙালি মেয়েটিই এ বারের মিস ইংল্যান্ড। বিলেতের সেরা সুন্দরীর শিরোপা তাঁর দখলে।

Advertisement

২৩ বছরের ভাষা মুখোপাধ্যায় কিন্তু আনন্দে গা ভাসানোর সময়ই পাননি। বৃহস্পতিবার রাতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা জিতে সে দিনই ভোর চারটের ট্রেন ধরেছেন। কারণ শুক্রবারই তাঁর লিঙ্কনশায়ারের হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা! এক দিকে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, অন্য দিকে পরের দিন প্রথম চাকরি! ভাষা দু’টোতেই সফল। শুক্রবার ঠিক সময়েই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘ঠিক বলতে পারব না, কোনটা নিয়ে বেশি নার্ভাস ছিলাম আমি! প্রতিযোগিতাটা জেতার পরে কান্না থামাতে পারছিলাম না, সবটাই খুব অবাস্তব মনে হচ্ছিল!’’

ভাষার জন্ম ভারতে। ন’বছর বয়সে ইংল্যান্ড যাওয়া। পড়াশোনাও সেখানেই। ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, জার্মান, ফরাসি ভাষায় অনায়াস, সঙ্গে দু’টো ডাক্তারি ডিগ্রি! প্রথম প্রথম ও দেশে গিয়ে খানিকটা একা-একা লাগত। অনেক বার স্কুল বদল করতে হয়েছিল। ফলে সব জায়গায় ‘নবাগত’ তকমা। ‘‘স্কুলে শুনতে হত আমি নাকি খেপাটে, আমি নাকি নাটুকে। আমার আশ্রয় ছিল পড়াশোনা আর নানা রকম প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার অভ্যাস। শিক্ষকরা বরাবর আমায় খুব ভালবাসতেন।’’ তখন স্বপ্ন ছিল মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। পরে সেটা বদলে গেল ডাক্তারিতে।

Advertisement

স্কুল শেষ করার পরে পড়ার পাশাপাশি মডেলিং শুরু করেছিলেন। ডাক্তারি পড়ার মাঝপথেই প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় আসা। ‘‘অনেকে অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করাল আমায়। আমারও মনে হল, পড়াশোনার পাশাপাশি একটা অন্য রকম কাজ থাকলে একটু হাঁফ ছাড়ার জায়গা থাকবে।’’

মিস ইংল্যান্ডে আসার আগে ২০১৬-তে ভাষা ব্রিটেনের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। বস্তুত বৈচিত্র্যের উদ্‌যাপন এ বারের মিস ইংল্যান্ডেরও একটা বড় লক্ষ্য ছিল। যেমন চূড়ান্ত পর্বের এক প্রতিযোগী আয়েশা খান সাঁতার-পোশাক পর্বে ওয়েটস্যুট পরেছিলেন। বলেই দিয়েছিলেন, ওর চেয়ে বেশি খোলামেলা পোশাকে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। আয়োজকরা তাতেই রাজি।

ভাষাও বলছেন, বৈচিত্রের কথা, বদ্ধমূল ধারণা বদলানোর কথা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একটা জিনিসই মানুষকে বলতে চাই। স্রেফ দেখতে ভাল, এটাই আমাদের পরিচয় নয়। সুন্দরী হলেই বুদ্ধিহীন হবে, এই ভাবনাটা বদলানো দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন