মঞ্চ মাতাতে স্পিলবার্গের পাঠশালায় হিলারি

মঞ্চে কথা বলার সময়ে বড্ড বিরক্ত দেখায় তাঁকে। মনে হয়, কোনও কারণে রেগে গিয়েছেন বোধহয়! নিজের বক্তৃতার এমনই সমালোচনা শুনতে হচ্ছিল ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

মঞ্চে কথা বলার সময়ে বড্ড বিরক্ত দেখায় তাঁকে। মনে হয়, কোনও কারণে রেগে গিয়েছেন বোধহয়! নিজের বক্তৃতার এমনই সমালোচনা শুনতে হচ্ছিল ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে! এমন চললে ভোট-ভাগ্যে যে শিকে ছিঁড়বে না তা বুঝে স্ত্রীকে স্টিভেন স্পিলবার্গের কাছে অভিনয় শিক্ষার পরামর্শ েদন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন! প্রথমটায় চটে গেলেও শেষমেশ অভিজ্ঞ স্বামীর পরামর্শে নিজেকে ‘পছন্দসই’ আর ‘আন্তরিক’ হিসেবে তুলে ধরতে স্পিলবার্গের দ্বারস্থই হন হিলারি ক্লিন্টন!

Advertisement

মার্কিন সাংবাদিক এডওয়ার্ড ক্লেইনের লেখা ‘আইলাইকব্‌ল: দ্য প্রবলেম উইথ হিলারি’ নামের বইটিতে এমনটাই দাবি করেছেন এডওয়ার্ড। আগামী মাসেই বইটি প্রকাশিত হতে চলেছে। তার আগেই জনপ্রিয় এই লেখকের কলমে উঠে আসা হিলারি ক্লিন্টনের ‘গোপন কথা’ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চর্চা।

এডওয়াের্ডর দাবি, এক দিন বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে করতে হিলারিকে এই ‘গ্রুমিং’ পর্বে পাঠানোর প্রসঙ্গ ওঠে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে দর্শককে মোহিত করাটাই যে তাঁর লক্ষ্য, সে কথাও ওঠে। তা শুনে রীতিমতো রেগে যান হিলারি। এডওয়ার্ডের মতে, হিলারি বলেছিলেন, ‘‘এক বার বক্তৃতা করার জন্য আড়াই লক্ষ ডলার উপার্জন করি আমি। হলিউডের লোকজনের কাছে এ বার কথা বলা শিখতে হবে!’’ তাতে অবশ্য দমে যাননি বিল। বরং নিজেই উদ্যোগী হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পারিবারিক বন্ধু স্পিলবার্গের দ্বারস্থ হন। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারিকে বিল পরামর্শ দেন, বক্তৃতায় তাঁদের মেয়ে চেলসি বা নাতনি শার্লটের নাম বার বার ব্যবহার করতে।

Advertisement

তার পর স্পিলবার্গের অভিনয় ‘কোচিং’ দলের সঙ্গে শুরু হয় হিলারির গ্রুমিংয়ের পালা। গুরুর নির্দেশে প্রথমেই ডাক পড়ে এক চিত্রগ্রাহকের। এডওয়ার্ড জানাচ্ছেন, ফাঁকা একটি ঘরে বক্তৃতা করতে বলা হয়েছিল হিলারিকে। সেই ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করে পাঠানো হতো স্পিলবার্গের কাছে। আর সেই সব টেপ কাটাছেঁড়া করতে বসতেন স্পিলবার্গের বেছে দেওয়া বিশেষজ্ঞ ‘কোচ’রা! পাশাপাশি, বক্তৃতার সেই রেকর্ডং খুঁটিয়ে দেখতেন হিলারি নিজেও। বিশেষজ্ঞরা হিলারির প্রথম টেপ দেখে জানিয়েছিলেন, জনগণের সামনে কথা বলার সময় বেশ রাগী-রাগী মনে হয় তাঁকে। সে অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দেন হিলারি!

প্রাথমিক সমস্যা খুঁজে বের করার পরে শুরু হয় আসল পাঠ। বইটিতে দাবি করা হয়েছে, পাঠপর্ব চলাকালীন হিলারির বাড়িতে অপ্রত্যাশিত ভাবে একটি ক্যামেরার উঁকিঝুঁকি টের পান এক বন্ধু। প্রশ্ন করতে হিলারি বলেছিলেন, ‘‘আমার কোচেরা বলেছেন, বক্তৃতা করার সময় আমাকে অভিনয় করতে হবে। দেখাতে হবে, যেন শ্রোতাদের আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’’ তবে ব্যাপারটা যে খুব ‘বোরিং’ তা-ও স্পষ্টই জানিয়েছিলেন হিলারি।

এডওয়ার্ডের বই থেকে জানা যাচ্ছে, সেই সময় হিলারি আরও বলেছিলেন, ‘‘আমাকে জোর করে হাসতে হবে। ভাল ভাল কথা মনে করতে হবে। চেলসি (মেয়ে), শার্লট (নাতনি) বা আমার মায়ের কথা মনে করতে হবে।’’ কোচদের কথা যে বেশ গুরুত্ব দিয়েই শুনছেন, হিলারির কথায় সে রকমই ইঙ্গিত মিলেছিল।

মা-নাতি-নাতনির কথায় মন ভাল হয়ে গেলেও স্বামীর কথা যে ভুল করেও মনে আনেন না, তা-ও এক বন্ধুকে বলেছিলেন হিলারি। এডওয়ার্ড জানাচ্ছেন, হিলারি বলেন, ‘‘বিলকে খুব ভালবাসলেও ওর কথা ভেবে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে!’’

তবে পরিস্থিতি পাল্টায় নির্বাচনের প্রচার শুরুর পরেই! বন্ধ ঘরে বক্তৃতার পাঠ চললেও প্রকাশ্যে বক্তৃতার সময়ে সে দাওয়াই আদৌ কাজ করছিল না। দর্শকদের সঙ্গে চোখ মিলিয়ে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলেন নেত্রী।

যে রাগী-রাগী চেহারা লুকোতে অভিনয়ের পাঠ নিচ্ছিলেন, শেষমেশ সেই রাগের চোটেই শেষ হল পাঠ-পর্ব! এক দিন রেগেমেগে ক্যামেরা উল্টে ফেলে দেন হিলারি। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেওছিলেন, ‘‘ঢের হয়েছে এ সব ক্যামেরা-রেকর্ডিং-কোচ। এত রেগে গিয়েছিলাম যে ধাক্কা মেরে ক্যামেরাটাই ফেলে দিই!’’

তার পর আর ফিরে তাকাননি হিলারি। ফিরেছেন বাস্তবে। অভিনয়ের পাঠ সেখানেই চুকেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন