আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণকারী জ়রিনা রফিক। ছবি: সংগৃহীত।
আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাক সেনার ঘাঁটিতে হামলা চালাল বিদ্রোহী বালোচদের অন্যতম সশস্ত্র গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)। রবিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের চাগাইতে পাক ফ্রন্টিয়ার কোরের এক ঘাঁটিতে হামলা চালায় বিএলএফ। এই হামলায় ছয় সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে ইসলামাবাদের তরফে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পরেই বিস্ফোরণকারীর ছবি প্রকাশ করেছে বিএলএফ। জ়রিনা রফিক ওরফে ত্রাং মাহু ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘আত্মত্যাগী’ বাহিনী ‘সাদ্দো অপারেশনাল ব্যাটেলিয়ন’-এর সদস্য। রবিবার পাক সেনার ফ্রন্টিয়ার কোরের ঘাঁটির সামনে নিজেকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেন জ়রিনা। তার পরেই সেনাঘাঁটির ভিতরে ঢুকে হামলা চালান বিএলএফ-র সশস্ত্র সদস্যেরা। প্রসঙ্গত, এই প্রথম আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক মহিলাকে ব্যবহার করল কোনও সশস্ত্র বালোচ গোষ্ঠী। তা ছাড়া এত দিন পর্যন্ত আত্মঘাতী বিস্ফোরণের মাধ্যমে হামলা চালানোর কৌশল প্রয়োগ করত বালোচ লিবারেশন আর্মি। এই প্রথম এই কৌশল কার্যকর করল বিদ্রোহী বালোচদের আর এক সংগঠন।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রবিবার যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে কেবল পাক সেনার ঘাঁটি নয়, চিনের তামা এবং সোনা খননের একটি কেন্দ্রও রয়েছে। অদূরেই রয়েছে কানাডার একটি সংস্থার দফতর। মনে করা হচ্ছে, ওই জায়গায় হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নজর কাড়়তে চাইছেন বিদ্রোহী বালোচেরা। ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএলএফ-এর মুখপাত্র গ্রারাম বালোচ। অন্য দিকে, বিএলএ-র তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ২৮ থেকে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ২৯টি হামলা চালিয়েছে তারা। এই হামলায় ২৭ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বিদ্রোহী বালোচদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, বালোচিস্তান প্রদেশের খনিজ সম্পদ ‘লুট’ করছে পাক সেনা। বিনিময়ে কিছুই ফিরিয়ে দিচ্ছে না তাদের। আফগানিস্তান প্রদেশ লাগোয়া ওই প্রদেশের অনুন্নয়নের জন্য ইসলামাবাদকেই দায়ী করে থাকে তারা। তা ছা়ড়া ওই প্রদেশের নানা প্রকল্পে চিনের ‘হস্তক্ষেপ’কেও সুনজরে দেখেন না বিদ্রোহী বালোচরা। এই পরিস্থিতিতে বালোচিস্তান প্রদেশে বালোচ বিদ্রোহীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পাকিস্তানি সেনা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ দেখা যায়। ঘটনাচক্রে, মার্চ মাসের গোড়াতেই অন্য দুই সশস্ত্র বালোচ গোষ্ঠী, বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) ও বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) এবং সিন্ধুপ্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন ‘সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি’র (এসআরএ) সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন যৌথমঞ্চ গড়েছে বিএলএ। ইসলামাবাদের অভিযোগ, ভারতের মদতেই একজোট হচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি।