মোল্লা ওমর। ফাইল চিত্র।
তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর। যাঁর বাসস্থান নিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারাও। তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাঘাঁটির একেবারে পাশেই থাকতেন, একেবারে পায়ে হাঁটা দূরত্বে! সম্প্রতি এমন তথ্যই তুলে ধরেছেন এক সাংবাদিক।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবানের প্রধান পদে থাকা ওমরের এই দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে তাঁকে নিয়ে জল্পনা কম হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে বার বার। ২০১৩-র এপ্রিলে করাচির হাসপাতালে ওমরের মৃত্যুর কথাও নিশ্চিত করেছিল আফগানিস্তান সরকার।
এ বার নেদারল্যান্ডসের এক সাংবাদিকের বইয়ে উঠে এল ওমরের বাসস্থান সংক্রান্ত নানা বিস্ফোরক তথ্য। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ঘাঁটি থেকে পায়ে হাঁটা দূরেই থাকতেন মোল্লা, বেট্টে ড্যামের বই বলছে এমনটাই।
ভারতে সন্ত্রাস হামলা নিয়ে এগুলি জানতেন?
১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রুশদের সঙ্গে লড়াই করার সময়ে একটা চোখ হারান ওমর। একটা হাতের কব্জি উড়ে যাওয়ার পর সেখানে বসে লোহার রড। ওমরের শরীরের এই বিশেষ দু’টি চিহ্ন উল্লেখ করে আমেরিকা তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১ কোটি ডলার। ওয়াশিংটনের দাবি, করাচিতে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওমর।
আরও পড়ুন: চালু হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি, ঠিক কী কী করা যাবে না জানেন?
তবে ২০১৩ সালে পাকিস্তানে নয়, আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশেই থাকতেন ওমর— ড্যামের বইয়ে রয়েছে এই তথ্য। ড্যাম বলেন, পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গেও ওমরের দেখা হত না। কাল্পনিক একটি ভাষায় ডায়েরিও লিখেছেন ওমর, বইয়ে লিখেছেন ড্যাম।
আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনে লড়তে রাজি নন, দলকে জানালেন মনমোহন
ওমরের দেহরক্ষী জাব্বার ওমরিকে পাঁচ বছর ধরে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ড্যাম। তালিবান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লেও সেই সময়ও দেহরক্ষী ছিলেন জাব্বার। বিবিসি-র সম্প্রচার শুনতেন ওমর। আল কায়দা সুপ্রিমো ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর খবরে কোনও মন্তব্য করেননি ওমর।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যু, স্বামীকে ফোনে না পেয়ে টুইট সুষমার
জাবুল প্রদেশের কালাতের একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকতেন ওমর। যে বাড়িতে অতিথি হয়ে থাকতেন ওমর। সেই বাড়ির সদস্যরাও রহস্যময় অতিথির নাম জানতেন না। কিন্তু একই এলাকা দিয়ে বারবার মার্কিন সেনাবাহিনী টহলদারি চালালেও ওমরের অস্তিত্ব তাঁদের কাছে ছিল একেবারেই অজানা।
এক বার মার্কিন সেনাবাহিনী ওমরের বাড়ির পাশ দিয়েও গিয়েছেন, বাড়িতে কে আছে জিজ্ঞাসাও করেছেন, কিন্তু ওইটুকুই। ওমরই যে রহস্যময় অতিথি, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি আমেরিকা, বইয়ে লিখেছেন ড্যাম। তবে সেটা রুটিন তল্লাশি ছিল কি না, তা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামায় গাড়ি ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী জঙ্গির মৃত্যু এনকাউন্টারে
ওমর ২০০৪ সাল নাগাদ ওই জায়গা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় আমেরিকা ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস তৈরি করা শুরু করেছে লাগম্যানে। পরবর্তীতে পেন্টাগন উলভেরিনে ফরওয়ার্ড অপারেটিং বেস তৈরি করে, প্রায় ১ হাজার মার্কিন সেনা থাকত সেখানে। ড্যাম জানিয়েছেন, ওমরের দেহরক্ষী তাঁকে বলেন, ওমরির সঙ্গে খুব কমই কথা বলতেন তিনি। পুরনো নোকিয়া ফোন ব্যবহার করতেন। ছিল না কোন সিম, আর মাঝে মাঝে কোরান আওড়াতেন।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবানশাসিত আফগানিস্তান ওমরের কথাতেই চলত, এমনটাই বলেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক শাখা ও ভগ্নাংশে বিভক্ত তালিবানের অস্তিত্ব বাঁচাতে ভরসা ছিল ওমরের নামটুকুই। সামনে না এলেও তাঁর নামেই এত দিন সংগঠনে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানে আল-কায়দা কার্যত ভেঙে পড়লেও ওমরের নাম সামনে রেখেই চলছিল সংগঠন।