মাত্র ১৯ ভোট বাঁচিয়ে দিল টেরেসা মে-কে

কাল সন্ধেবেলা পার্লামেন্টে বিপুল ভোটে টেরেসা মে-র প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধী নেতা, লেবার পার্টির জেরেমি করবিন। তবে কোনও মতে রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন টেরেসা। আস্থা ভোটে তাঁর পক্ষে ছিলেন ৩২৫ জন এমপি।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

টেরেসা মে।—ছবি এএফপি।

এত বড় সাংবিধানিক জটে এর আগে কখনও পড়েনি ব্রিটেন।

Advertisement

কাল সন্ধেবেলা পার্লামেন্টে বিপুল ভোটে টেরেসা মে-র প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধী নেতা, লেবার পার্টির জেরেমি করবিন। তবে কোনও মতে রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন টেরেসা। আস্থা ভোটে তাঁর পক্ষে ছিলেন ৩২৫ জন এমপি। বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৩০৬টি। অর্থাৎ মাত্র ১৯টি ভোট এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে টেরেসার গদি। ব্রেক্সিট সমস্যার সমাধানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আজ রাত থেকেই সব দলের এমপি-দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন টেরেসা।

কাল টেরেসার চুক্তির পক্ষে ভোট দেন মাত্র ২০২ জন এমপি। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৪৩২টি। ব্রিটিশ সংসদীয় ইতিহাসে এত বড় হারের আর কোনও নজির নেই। ১৯২৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী র‌্যামসে ম্যাকডোনাল্ড পার্লামেন্টে ১৬৬টি ভোটে হেরেছিলেন। আর টেরেসা হারলেন ২৩০ ভোটে!

Advertisement

অনাস্থা-ফাঁড়া পার হতে পারলেও টেরেসার উপর আর একটি চাপ বাড়ছে। তা হল, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া চালু করার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া। দু’বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ সক্রিয় করে ব্রিটেন জানিয়েছিল, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মাত্র ৭০ দিনে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে ব্রেক্সিটপন্থীরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন, পিছিয়ে দেওয়া হোক ব্রেক্সিট।

কাল রাতে পার্লামেন্টে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি তোলেন লেবার এমপিরা। তাঁদের বক্তব্য, ব্রিটেনের মানুষকে আর এক বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে এ ক্ষেত্রেও একটা অসুবিধা রয়েছে। লেবার নেতা জেরেমি করবিন নিজে দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে নন। লেবার এমপি ডেভিড ল্যামি আজ বলেন, ‘‘আমরা চাই এখনই সাধারণ নির্বাচন হোক। কিন্তু তা যদি না হয়, আমাদের দলের অধিকাংশ এমপি-ই দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে রায় দেবেন। তখন করবিনকেও তা মেনে নিতে হবে।’’ দ্বিতীয় গণভোটের পক্ষে সওয়াল করছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান-ও। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষজন এখন পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল হয়েছেন। তাঁদের আর এক বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’’

কনজ়ারভেটিভ দলে অবশ্য দ্বিতীয় গণভোট নয়, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল চলছে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার এবং এসএনপি নেত্রী নিকোলা স্টুজেরন-ও অনুচ্ছেদ ৫০ স্থগিত করার পক্ষে। তিনি আজ বলেন, ‘‘অনুচ্ছেদ ৫০-এর ঘড়ি সমানে টিকটিক করে চলছে। সেটা এখনই বন্ধ করা দরকার।’’

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কী হচ্ছে, সে দিকে নজর ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। টেরেসার সঙ্গে যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে বৈঠকে করতে হতে পারে, এই সম্ভাবনায় এ সপ্তাহের সব বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন ইইউ প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইউঙ্কার। আর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক টুইট করেছেন, ‘‘দ্বিতীয় গণভোট নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ কথা বলার সাহস কার আছে!’’

এ দিকে পার্লামেন্টের সামনে ভিড় জমিয়েছেন ব্রেক্সিট-পন্থী এবং ব্রেক্সিট-বিরোধী, দু’দলের মানুষই। কেউ চেঁচাচ্ছেন, ‘ব্রেক্সিট মানে ব্রেক্সিট-ই’। আর এক দলের হাতে পোস্টার, ‘থাকতে চাই’। পার্লামেন্টের ভিতরে যেমন, তেমন দেশও যেন দু’ভাগে বিভক্ত। নেতা ও সাধারণ মানুষ, সকলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন— এর পর কী?

আর উত্তরটা হল— সবই সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন