নেপালে ক্যাসিনো বন্ধ, নোট উড়ছে পানশালায়

পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি শিলিগুড়ির সিঙ্গিং-বার, ডান্স বার কিংবা ডিস্কোয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় রোজই দেদার উড়ছে বাতিল হওয়া নোট। কিন্তু, ভারতে এই দু’টি নোট বাতিলের জেরে রাতারাতি ঝাঁপ ফেলে দিতে হয়েছে পড়শি দেশ নেপালের কাঁকরভিটার দু’টি ক্যাসিনোর।

Advertisement

কিশোর সাহা

কাঁকরভিটা (নেপাল) শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি শিলিগুড়ির সিঙ্গিং-বার, ডান্স বার কিংবা ডিস্কোয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় রোজই দেদার উড়ছে বাতিল হওয়া নোট। কিন্তু, ভারতে এই দু’টি নোট বাতিলের জেরে রাতারাতি ঝাঁপ ফেলে দিতে হয়েছে পড়শি দেশ নেপালের কাঁকরভিটার দু’টি ক্যাসিনোর।

Advertisement

শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে নেপালের মেচিনগর পুরসভার ওই দু’টি ক্যাসিনোয় স্থানীয়দের প্রবেশাধিকার নেই। ক্যাসিনো সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি সহ বিস্তীর্ণঁ এলাকার ঠিকাদার, নানা ধরনের এজেন্ট, উঠতি নেতা, ব্যবসায়ীদের একাংশই ভিড় করেন সেখানে। একটি ক্যাসিনোর প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা। আরেকটির ১০০০ টাকা। মঙ্গলবার রাতে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করার পরেই নেপালের রিজার্ভ ব্যাঙ্কও তা সে দেশে এখন চলবে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তারপরেই আপাতত ঝাঁপ গুটিয়ে ফেলেছেন রমরমিয়ে চলা দু’টি ক্যাসিনোর মালিকেরা।

মেচিনগর পুরসভা সূত্রের খবর, ভারতে নতুন নোট পুরোপুরি চালু হওয়ার পরে ফের ক্যাসিনো দুটি চালু করার কথা ভাবা হবে বলে মালিকপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। ওই সীমান্তের গা ঘেঁষে রয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ির রানিগঞ্জ-পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানকার প্রধান জগন্নাথ রায় বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় দু-পারের ব্যবসা একে অন্যের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেকটা নেপালের ওপরে নির্ভর করে। আবার নেপালের অনেক ব্যবসাই টিকে রয়েছে আমাদের লোকজনের ভরসায়। কাজেই দেশে নতুন নোট পর্যাপ্ত পরিমাণে না মেলা পর্যন্ত অনেক কিছুই থমকে থাকবে।’’

Advertisement

ঘটনা এটাই। নোট বাতিলের জেরে নেপাল সীমান্তের অবাধ বাণিজ্য এখন প্রায় থমকে। যেমন, রোজ শিলিগুড়ি, বাগডোগরা, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, জলপাইগুড়ি থেকে কয়েকশো ব্যক্তি ওই দু’টি ক্যাসিনোয় যাতায়াত করতেন। যে হেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্যাসিনোর অনুমতি নেই, তাই জুয়া খেলার অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে পরখ করতে উপচে পড়ত ভিড়। সঙ্গে পানশালা, নাচগান-সহ প্রমোদের হরেক আয়োজন থাকায় রোজ রাতে সেখানে মুঠো মুঠো ৫০০-১০০০ টাকার নোট উড়ত বলে এলাকার বাসিন্দারাই অনেকে জানিয়েছেন।

শিলিগুড়িতে পানশালায় কিন্তু বাতিল নোট উড়ছে। গায়ক-গায়িকা, নর্তকীদের বখশিস হিসেবে কোথাও বাক্সে টাকা ফেলেন খদ্দেররা। কোথাও টাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। পানশালার নাচগানের আসরের আধো অন্ধকারে কে, কখন কত টাকার নোট উড়িয়ে দিচ্ছেন, তা খেয়াল রাখা সহজ নয়। তবে পানশালা মালিকদের সংগঠনের কয়েকজন সদস্য জানান, গোটা বিষয়টিই ভিডিও ফুটেজে রাখা থাকে। প্রশাসন চাইলে ফুটেজ দেওয়া হবে। কিন্তু, বাতিল টাকা চলবে কী ভাবে! পানশালার গায়িকাদের কয়েকজন জানান, গোটা শিলিগুড়িতে অন্তত ৩২০ জন গায়ক-গায়িকা, নর্তকী রয়েছেন। প্রায় সকলেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফলে, একেক জনের আড়াই লক্ষ টাকা করে অ্যাকাউন্টে জমা করতে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।

তবে পুলিশ-প্রশাসন-আবগারি দফতরের নজরেও সব রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কোথায়, কে কত টাকা ওড়াচ্ছেন তা ফুটেজ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন