প্রতীকী ছবি।
চিন-পাক আর্থিক করিডর (সিপিএসি) নিয়ে আগে থেকেই দিল্লির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে রয়েছে বেজিং। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে এই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ভারত তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে এর। বিতর্কে জড়িয়ে পড়া প্রস্তাবিত ওই সড়ককেই এ বার পাকিস্তান ছাড়িয়ে আফগানিস্তান পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় চিন।
তবে এর জন্য দরকার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সমঝোতা। সমস্যা হল, ১৯৪৭-এ পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই মসৃণ নয় দু’দেশের সম্পর্ক। গত কয়েক বছর ধরে তা বেশ তিক্ত আফগানিস্তানে তালিবানি সন্ত্রাসের পিছনে পাক মদতের কারণে। দু’দেশকে আলোচনায় বসানোর উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিল ২০১৫-তে। কিন্তু চিন এখন সিপিইসি-কে প্রসারিত করার পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে পাক-আফগান আলোচনায় সহায়ক ভূমিকা নিতে তৎপর। সেই সূত্রেই আজ প্রথম বার বেজিংয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চিনের বিদেশমন্ত্রীরা বৈঠক করলেন। আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিকে সঙ্গে রেখেও এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জোর দেওয়া হয় সন্ত্রাসে মদত বন্ধ করার দিকে।
বৈঠকের পরে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই তিন দেশ নিজেদের ভূখণ্ড সন্ত্রাসবাদী বা জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দেবে না। বিশেষ করে তাদের, যারা অন্যের দেশে আঘাত হানতে চায়। সন্দেহ নেই, আঙুলটি এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের দিকেই। কূটনীতিকদের মতে, পাকিস্তানকে দু’টি কারণে নরম অবস্থান নিতে হচ্ছে। এক, আমেরিকার চাপ। দুই বন্ধু চিনের স্বার্থ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের নয়া আফগান-পাক নীতি জানিয়ে দেওয়ার পর থেকে ইসলামাবাদ বেশ চাপে রয়েছে। পাকিস্তানের সহায়তা ছাড়াই তালিবান নির্মূলের অভিযানে নামতে চায় আমেরিকা। স্পষ্ট ভাবে তারা হুঁশিয়ার করেছে, ইসলামাবাদ যেন তালিবান জঙ্গিদের সাহায্য করা বন্ধ করে। সন্ত্রাসবাদী, তালিবান জঙ্গি ও অপরাধীদের নিকেশ করতে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে অভিযান চালানোর বিশেষ ক্ষমতাও মার্কিন সেনার হাতে তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প। যা কিনা স্মরণ করিয়ে দেয় পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে খতম করার অভিযানের কথা। মার্কিন আর্থিক- সামরিক সাহায্য খোয়ানোর ঝুঁকি এড়াতেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় ভাবমূর্তি তুলে ধরার দায় রয়েছে ইসলামবাদের।
চিনের কথাও ফেলার মতো জায়গায় নেই পাক কর্তারা। সন্ত্রাস নিয়ে গোটা বিশ্ব তুলোধোনা করলেও বেজিং তাদের পাশে রয়েছে। দরকারে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের কূটনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করছে চিন। পাকিস্তানের নান প্রকল্পে বিপুল অর্থও ঢেলে যাচ্ছে। যে কারণে এ দিনের বৈঠকের পরে পাক বিদশমন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘‘চিন ও পাকিস্তান লৌহবন্ধনে আবদ্ধ দুই ভাই।’’ তবে সিপিএসি আফগানিস্তান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি পাক বিদেশমন্ত্রী।
এটা ঘটনা যে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এখন পরিকাঠামো গড়ে তোলা। এই পরিস্থিতিতে প্রথম সফল ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে চিনের বিদেশমন্ত্রী জানান, ‘‘তিনটি দেশেরই লাভ হয়, এমন ভাবে এগোনোই তাঁদের লক্ষ্য। প্রথমে সহজতর প্রকল্পের দিকে নজর দিতে চান তাঁরা। আগামী বছর পরের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি হবে কাবুলে।