উঁচু বাড়ির গা বেয়ে অনায়াসে ওঠানামা করতেন। কোনও সুরক্ষা ছাড়াই আকাশছোঁয়া বাড়ির মাথায় চড়ে নিজস্বী তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছিল তাঁর নেশা। পেশাও বটে। সেই খেলা দেখাতে গিয়েই প্রাণ হারালেন চিনের ২৬ বছরের স্টান্টম্যান ইউ ইয়ুংনিং।
ঘটনাটি মাসখানেক আগের। সামনে এসেছে সম্প্রতি। ৮ নভেম্বর চিনের হুনান প্রদেশের চাংশায় একটি ৬২ তলা বাড়ির ছাদে ঝুলে কসরত দেখাতে গিয়ে পড়ে মারা যান ইউ।
ফ্যানমহলে ‘চিনা সুপারম্যান’ নামে এক ডাকে সকলেই চিনত তাঁকে। মার্শাল আর্ট জানা ইউ তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। বেশ কিছু সিনেমায় স্টান্টম্যান হিসেবে কাজও করেছেন তিনি। সম্প্রতি সে সব ছেড়ে পুরোপুরি এই মারণখেলায় মেতেছিলেন ইউ। চিনের সোশ্যাল মিডিয়ায় চড়া দামে বিক্রি হত এই সমস্ত ছবি আর ভিডিও। তবে ৮ নভেম্বরের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউয়ের নতুন কোনও ছবি, ভিডিও দেখতে না পেয়ে ফ্যানেরা উগ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কানাঘুষোয় ছড়াচ্ছিল ইউয়ের মৃত্যুর খবর। সম্প্রতি সব জল্পনা থামিয়ে ইউয়ের প্রেমিকা সোশ্যাল মিডিয়াতেই ওই যুবকের মৃত্যুর খবর মেনে নেন। সেই সূত্রেই প্রকাশ্যে আসে ইউয়ের তোলা শেষ ভিডিও ক্লিপটি। দেখা যাচ্ছে, বহুতলের ছাদের কিনারে ঝুলছেন ইউ। সেলফি স্টিকে উঠছে ছবি। কসরত দেখিয়ে ফের ছাদে উঠতে গিয়েই বিপত্তি। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে ইউয়ের মুঠো। নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তিনি। কিছু ক্ষণ ওভাবে ঝুলে থাকার পরেই পড়ে যান ইউ।
মাস দু’য়েক আগে শিকাগোর এক হোটেলে এমনই কসরত দেখাতে গিয়ে মারা যান বছর চুয়াল্লিশের এক ব্যক্তি। ইউয়ের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে, কীসের টানে এই ঝুঁকির খেলায় মাতছে নতুন প্রজন্ম? পুলিশের ভূমিকাই বা কী?
আরও পড়ুন: প্রয়াত উত্তর কোরিয়ায় পলাতক মার্কিন সেনা
জানা গিয়েছে, প্রায় ২০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাণ বাজি রেখে ওই বহুতলের ছাদে উঠেছিলেন ইউ। জানিয়েছিলেন মায়ের চিকিৎসা আর নিজের বিয়ের টাকা জোগাড় করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে কে বা কারা ইউকে ওই বিপুল অঙ্কের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা যায়নি।
পুলিশ বলছে, কোনও রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এই ধরনের কসরত দেখানো বেআইনি। বহু ক্ষেত্রেই জখম হন খেলোয়াড়রা। তাই ইউয়ের মতো তরুণদের সতর্ক করতে সম্প্রতি কয়েক জনকে আটক করে চিনের পুলিশ। তবু শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেল না আরও একটা মৃত্যু।