ক্রিস্টি-নিলামে অমৃতার আত্মপ্রতিকৃতি

আত্মপ্রতিকৃতি, কিন্তু তিনি রয়েছেন মুখ ফিরিয়ে। দর্শক তাঁকে দেখছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি উদাসীন। এটাই এ ছবির বিশেষত্ব। ছবিটি এ জন্যই ব্যতিক্রমী, সমালোচকদের চোখে। বিশ শতকের অন্যতম ভারতীয় চিত্রশিল্পী অমৃতা শেরগিল অন্তত ২০টি আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছেন। কিন্তু বাকি ১৯টির কোনওটিতেই তিনি নিজের এমন পার্শ্বপ্রতিকৃতি (প্রোফাইল) তুলে ধরেননি। শিল্পীর মাত্র ১৮ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিটি এত দিন চোখের আড়ালেই ছিল বলা চলে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

এই সেই ছবি, যা নিলামে উঠবে ১০ জুন।

আত্মপ্রতিকৃতি, কিন্তু তিনি রয়েছেন মুখ ফিরিয়ে। দর্শক তাঁকে দেখছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি উদাসীন। এটাই এ ছবির বিশেষত্ব। ছবিটি এ জন্যই ব্যতিক্রমী, সমালোচকদের চোখে।

Advertisement

বিশ শতকের অন্যতম ভারতীয় চিত্রশিল্পী অমৃতা শেরগিল অন্তত ২০টি আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছেন। কিন্তু বাকি ১৯টির কোনওটিতেই তিনি নিজের এমন পার্শ্বপ্রতিকৃতি (প্রোফাইল) তুলে ধরেননি। শিল্পীর মাত্র ১৮ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিটি এত দিন চোখের আড়ালেই ছিল বলা চলে। এ বার লন্ডনের ক্রিস্টিজে নিলামে উঠতে চলেছে সেটি। সমালোচকদের আশা, ছবিটির দর ছুঁতে পারে অন্তত দশ কোটি টাকার কাছাকাছি।

১৯৩১ সাল। অমৃতা তখন অষ্টাদশী। প্যারিসে বসে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বের মধ্যে শিল্পী নিজের চোখে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। আঁকার পরে কোনও প্রদর্শনীতেই আজ পর্যন্ত দেখানো হয়নি এই ছবিটি। ফ্রান্সেই রয়ে গিয়েছিল। এ বার অতলান্তিক মহাসাগর পেরিয়ে তা প্রথমে পা রাখবে নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টিজ-এ। সেখানে প্রদর্শনীর পরে লন্ডন যাত্রা। এই প্রথম সেখানে ক্রিস্টিজে ১০ জুন নিলামে উঠতে চলেছে অমৃতার ছবি।

Advertisement

শিল্পী যখন ১৬-র দোরগোড়ায়, তখনই ‘ইকোলে ন্যাশেনাল দে বো আর্টস’-এ পড়াশোনার জন্য তিনি পাড়ি দেন প্যারিসে। আর সেখানেই এই অনন্য সৃষ্টি অমৃতার। ছবিতে শিল্পীর সামনেই রাখা রয়েছে একটি সোনালী রঙের ফাঁকা বাটি। সেই শূন্য পাত্র আর অষ্টাদশী মেয়েটির অন্তরের শূন্যতা কোথাও যেন এক হয়ে গিয়েছে। দু’টি সম্পর্কের টানাপড়েনে যেন দীর্ণ হয়ে পড়েছিল তাঁর হৃদয়।

কোন দুই সম্পর্ক? যে বছর এই তুলি ধরেছিলেন অমৃতা, সেই ১৯৩১ সালেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় ইউসুফ আলি খান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ভারতের অভিজাত পরিবারের সন্তান ইউসুফের পাশাপাশি নিকটাত্মীয় (তুতো ভাই) ভিক্টর এগানের সঙ্গেও প্রেম চলছিল অমৃতার— গুজব তেমনই। পরে যদিও এগানের সঙ্গেই গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন শিল্পী। ১৯৩১ সালে ইউসুফ আর ভিক্টর, দু’জনেরই প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন অমৃতা। দু’টি ছবিতে ইউসুফ আর ভিক্টর যেন আত্মানুসন্ধানের দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন। তাঁদের দু’জনেরই ভাগ্য নির্ধারণ করবেন যিনি, সুন্দরী সেই চিত্রশিল্পীর কথা ভেবেই মগ্ন দুই প্রেমিক। এই দু’টি ছবি এবং শেরগিলের পার্শ্ব আত্মপ্রতিকৃতি— সব ক’টিই অমৃতা এঁকেছিলেন ওই একই বছরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিনটি ছবির মধ্যে রয়েছে এক না-বলা সম্পর্ক। ত্রিমাত্রিক প্রেম, যা শুধু ওই তিন জনেই অনুভব করেছিলেন। তিনটি প্রতিকৃতির কোনওটিই তাই দর্শকের দিকে তাকিয়ে নেই। তাঁরা নিজেদের সঙ্গে যেন আলাপ চালাচ্ছেন।

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ১৯১৩-য় জন্ম অমৃতার। মা হাঙ্গেরীয় হলেও চিত্রশিল্পীর বাবা ছিলেন ভারতীয়। মাত্র ২৮ বছর বাঁচেন প্রতিভাবান এই শিল্পী। এই সময়েই তৈরি করেন নিজস্ব আঙ্গিক। ১৯৭২-এ সালে ভারত সরকার অমৃতার সৃষ্টিকে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা করে। তাঁর অনেক ছবিই এখন দিল্লির ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট’-এ রয়েছে।

যে ছবির কথা কেউ জানতই না, তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আনতে পেরে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ক্রিস্টিজ। তাঁরা বলেছেন, ‘‘শেরগিলের এই ছবিটি উদ্ধার করে চিত্র-অনুরাগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া গর্বের ব্যাপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন