দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চুকেবুকে যাওয়ার পর থেকেই রাশিয়াকে নজরে নজরে রাখার কাজটা শুরু করে দিয়েছিল আমেরিকা!
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সবক’টা টেলিফোন লাইন ‘ট্যাপ’ করতে অত্যন্ত গোপনে একটি ৪০০ মিটার লম্বা ‘টানেল’ বা সুড়ঙ্গ বানিয়ে ফেলেছিল আমেরিকা। আর সেই সুড়ঙ্গ বানানোর কাজটা আমেরিকা করেছিল ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬, এই পাঁচ বছরের মধ্যে। ১১ মাস ১১ দিন পর এক ‘ডাব্ল এজেন্ট’ জার্মান জর্জ ব্লেক সেই গোপন মার্কিন সুড়ঙ্গের হদিশ পেয়ে যান। তিনি ছিলেন জার্মানির এক সরকারি নিরাপত্তারক্ষী। তিনি ওই সুড়ঙ্গটির ওপর দিয়েই রোজ যাওয়া-আসা করতেন এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য। ব্লেক গোপনে সোভিয়েতের গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। এর পরেই বার্লিনে বন্ধ হয়ে যায় সোভিয়েতের টেলিফোন লাইনে আড়িপাতার জন্য বানানো মার্কিন সুড়ঙ্গটি।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সদ্য প্রকাশিত গোপন নথি থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। মিলেছে সেই গোপন সুড়ঙ্গের ছবিও।
সিআইএ’র নথি থেকে: সোভিয়েতের ফোনে আড়ি পাততে বার্লিনে এই সুড়ঙ্গ বানিয়েছিল আমেরিকা।
কাজটা ২০ বছর আগে করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। ১৯৯৫ সালে দেওয়া ক্লিন্টনের সেই নির্দেশ আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ) পালন করল গত সোমবার। সাধারণ মালুষের সামনে নিয়ে এল এত দিন লুকিয়েচুরিয়ে রাখা গত ৫০ বছরের বিশ্ব ইতিহাসকে। তাদের ‘অত্যন্ত গোপন নথি’ বা ‘কনফিডেনশিয়াল মেমো’র এক কোটি ২০ লক্ষ পাতাকে সরাসরি অনলাইনে প্রকাশ (ডিক্লাসিফাই) করে।
আরও পড়ুন- ভিনগ্রহীরা বার বার আসছে পৃথিবীতে! গোপন নথি প্রকাশ করল সিআইএ
সিআইয়ের সেই ‘বিস্ফোরক’ গোপন নথিতে কী নেই? রয়েছে বার বার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভিনগ্রহীদের ‘মহাকাশযান’- ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ (ইউএফও) বা ‘উড়ন্ত চাকি’র হদিশ মেলার খবর। রয়েছে সে সম্পর্কে নানা রকমের তথ্যপ্রমাণ। সেই সব তথ্যপ্রমাণ আর তা নিয়ে তদন্ত, অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের দেওয়া নির্দেশ, নোটস। রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই বার্লিনে আমেরিকার একটি গোপন সুড়ঙ্গ বানানোর কাজের ছবি আর সে সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য। রয়েছে দীর্ঘ দিন রণক্ষেত্রে থাকার দরুন মার্কিন সেনা জওয়ানরা মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন কি না, তা খতিয়ে দেখার রিপোর্ট। যার নাম- ‘প্রোজেক্ট স্টারগেট’। রয়েছে কিউবা, কোরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংক্রান্ত এতাবৎ গোপন অনেক খবরাখবর। রয়েছে নাৎসি বাহিনীর নানা রকমের অপরাধমূলক কাজকর্মের সবিস্তার খতিয়ানও। মার্কিন মুলুকে ২০১৪ সালের তথ্যের স্বাধীনতা আইন মোতাবেক ওই সব ‘গোপন নথি’ এ বার ‘ডিক্লাসিফাই’ (প্রকাশ) করল সিআইএ। আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা মোট ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ‘গোপন নথি’ প্রকাশ করবে, ধাপে ধাপে। আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যেই।