হতবাক অনেকেই, তবু আসছে বন্ধুত্ব-বার্তা

একটা দেওয়াল শুধু! চোখের সামনে যেন আর কিছু নেই। ঘোর কাটছে না রাউল বেনিটেজ মানাউতের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

একটা দেওয়াল শুধু!

Advertisement

চোখের সামনে যেন আর কিছু নেই। ঘোর কাটছে না রাউল বেনিটেজ মানাউতের। ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে মেক্সিকোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। মার্কিন ভোটের ফলপ্রকাশে যেন রাতারাতি বেকুব বনে গিয়েছেন— ‘‘শেষ পর্যন্ত কি না, ওই লোকটাই!’’ অভিবাসন ঠেকাতে যিনি দু’দেশের মধ্যে দেওয়াল তোলার কথা বলেন, শরণার্থীদের ‘ধর্ষক’ বলতেও পিছপা হন না— তিনিই ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট অব আমেরিকা’!

হোয়াইট হাউসের অলিন্দে ডোনাল্ড ট্রাম্প— ঠিক এই ছবিটাই প্রাণপণে অস্বীকার করতে চাইছে মেক্সিকোর একটা বড় অংশ। প্রবল ঘৃণায়। আর তার চেয়েও বেশি ভয়ে। অধ্যাপক বেনিটেজ যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার মানে ঘোর সর্বনাশ।’’ ২০০৭ থেকে ২০১৩— মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হয়ে টানা ছ’বছর চিনে ছিলেন জর্জ গুয়াজার্দো। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা তাঁর কাছেও দুঃস্বপ্নের মতো। মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেনা নিয়েতো পর্যন্ত ট্রাম্পকে সরাসরি অভিনন্দন জানাননি।

Advertisement

অশান্তি ঘরেও। ভবিষ্যতের হোয়াইট হাউস ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছে দেশেরই একটা বড় অংশ। যেমন, মিশিগান রাজ্যের ডিয়ারবর্ন শহর। সেখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বাসিন্দা মুসলিম। প্রচারের শুরুতে ট্রাম্প যখন শরণার্থী ঠেকানোর কথা বলেছিলেন, তখন থেকেই বুক কাঁপছিল ডিয়ারবর্নের। পরে তিনি কিছুটা সুর নরম করলেও বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। যেমন স্থানীয় শিক্ষক জয়নাব সলমন। তাঁর কথায়, ‘‘ভয় হচ্ছে, এ বার সবাই যেন ওঁর কোপে না পড়ি!’’ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে ট্রাম্পের জমানা ‘কঠিন’ হতে চলেছে বলেই মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তা সত্ত্বেও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুল্জ বলেছেন, ‘‘হোয়াইট হাউসের তরফে সহযোগিতা পাব বলে আশা রাখছি।’’

প্রচারের শুরু থেকেই মহিলাদের নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান পদপ্রার্থী। উঠে এসেছে যৌন কেচ্ছার অভিযোগও। ভোটের আগের সমীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি একাধিক বার এগিয়েছেন। প্রকাশ্য বিতর্কেও ট্রাম্পকে টেক্কা দিয়েছেন হিলারি। অথচ শেষ পর্যন্ত বাজি মেরেছেন সেই ট্রাম্প। একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলছে, রক্ষণশীল মহিলা ভোটের প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট গিয়েছে ট্রাম্পের ঝুলিতেই।

রাজনীতির চৌহদ্দিতে নিজেই নিজেকে ‘আগন্তুক’ বলেন ট্রাম্প। আজ দেখা যাচ্ছে, দু-একটি দেশের অখ্যাত মন্ত্রী-কূটনীতিক বা সংবাদমাধ্যমের একাংশ বাদে তাঁকে খুব একটা ঘাঁটায়নি কেউ। সতর্ক নজর রেখে বন্ধুত্ব বার্তা— মূল সুর এটাই।

রাশিয়ার কথা আলাদা। নেতা হিসেবে বারাক ওবামার চেয়েও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বেশি নম্বর দিয়েছিলেন ট্রাম্প। একাধিক প্রচারসভায় রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব পেড়েছিলেন। এমনকী জঙ্গি দমনে পাশে থাকার কথাও বলেছিলেন। তাই তাঁর জয় ঘোষণা হতেই বার্তা আসে ক্রেমলিন থেকে। পুতিন বলেছেন, ‘‘রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্কের উন্নতিতে আমরা যথাসাধ্য করব।’’ বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইন। ইরাক চেয়েছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরও জোরদার মদত। তবে পুতিন-ট্রাম্প সৌহার্দ্যের আবহে ইউক্রেন কিছুটা উদ্বেগে।

আশঙ্কা আর উদ্বেগ টের পাওয়া গিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি-সহ ইউরোপের একটা বড় অংশে। এক জার্মান মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প যে কী করবেন, আমাদের কোনও ধারণাই নেই।’’ আমেরিকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত টুইটারে লেখেন, ‘‘প্রথমে ব্রেক্সিট, আর এখন ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস দখল। এখন তো মনে হচ্ছে পৃথিবীতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়!’’ চলতি বছরটিকে ‘জোড়া বিপর্যয়’ বলেছেন সুইডেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডও।

ব্রিটেন যদিও নয়া প্রেসিডেন্টের হাতে হাত রেখেই চলতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের বাজার ধরতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেশের নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে চাইছেন তিনি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতাবস্থা চেয়ে ভাবী প্রেসিডেন্টকে বার্তা পাঠিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আর চিন? সরকারি ভাবে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো হলেও ‘মার্কিন গণতন্ত্রের অধঃপতনে’ বাঁকা হাসি হেসেছে সংবাদমাধ্যম। চিন ও ভারতের মতো দেশ থেকে আউটসোর্সিং কমানো নিয়ে ট্রাম্প প্রথমে যা হুমকি দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতের সেই জল মাপতে চাইছে দু’দেশই। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প যে হেতু ভারত নিয়ে বিরূপ কোনও মন্তব্য করেননি, তাই ‘আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও জোরদার করার দিকে তাকিয়ে’ থাকার কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশও।

নানা মহল, নানা কথা। সমালোচনাও বহু। ট্রাম্প নাকি বিশ্ব রাজনীতির কিছুই বোঝেন না! দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে পরমাণু অস্ত্রে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। দেশের অর্থনীতির ‘বেহাল’ দশা নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে একহাত নিয়েছিলেন। তবু নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান বলছেন, ‘‘অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে গত আট বছরে বিশ্ব বাজারে যে অগ্রগতি হয়েছে, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আর ‘অজ্ঞ’ ট্রাম্প ফের তরী ডোবাবেন।’’

আদতে কী হয়! নজর আপাতত ট্রাম্প জমানার প্রথম ১০০ দিনের কাজেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন