Coronavirus

‘আইসোলেশনে’ রাজা, বিলাসবহুল হোটেলে ২০ রক্ষিতার হারেম, বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড়

পুরো হোটেলে অন্য কারোর বুকিংয়ের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে।   

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ব্যাঙ্কক ও বার্লিন শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ২১:৫৩
Share:

সহচরীদের সঙ্গে থাইল্যান্ডের রাজা। —ফাইল চিত্র

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কোয়রান্টিন বা আইসোলেশনই একমাত্র পথ। তাই নেতা থেকে আমজনতা বেছে নিচ্ছেন সেই পথ। তাইল্যান্ডের রাজাও ‘সেল্ফ আইসোলেশন’-এ গিয়েছেন। কিন্তু রাজা বলে কথা! আইসোলেশনের জন্য বেছে নিয়েছেন বিলাসবহুল হোটেল। রাজা মহা বাজিরালংকর্ন বা ‘দশম রাম’-এর সঙ্গী প্রায় গোটা ‘হারেম’— ২০ জন রক্ষিতা। তাও আবার নিজের দেশে নয়, জার্মানিতে পুরো একটা চারতারা হোটেল বুক করে উঠেছেন ৬৭ বছরের রাজা। পুরো হোটেলে অন্য কারোর বুকিংয়ের অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে।

Advertisement

আর এই খবর সামনে আসতেই দেশের মানুষের তীব্র সমালোচনার মুখে তাই রাজা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অধিকাংশেরই বক্তব্য, দেশের সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক, চিকিৎসক, নার্স করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে লড়ছেন, আর রাজা গিয়ে উঠেছেন জার্মানিতে! সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ‘হোয়াই ডু উই নিড এ কিং’ নামে প্রচার। তাতে রিঅ্যাক্ট করেছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। তা ছাড়া যেখানে আইসোলেশনের অর্থ একা থাকা, সেখানে পুরো হারেম নিয়ে গিয়ে থাকার অর্থ কি আদৌ আইসোলেশন— এই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। তাইল্যান্ডের রাজা বা রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কোনও কথা বললে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সংস্থান রয়েছে সে দেশের আইনে। কিন্তু তার পরেও তুমুল সমালোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

খবরটি প্রথম প্রকাশিত হয় জার্মানির জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘দ্য বিল্ড’-এ। তাদের দাবি, রাজার সঙ্গে শতাধিক পরিচারকও ছিল। তবে সংক্রমণের আশঙ্কায় সবাইকেই আপাতত ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রাজার সঙ্গী ওই ২০ সুন্দরী। রাজার চার জন রানি আছেন। কিন্তু ওই হোটেলে তাঁরা উঠেছেন কি না, সেটা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি ‘দ্য বিল্ড’। রাজা এবং তাঁর সহচরীদেরকেই ওই হোটেল চত্বরে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫০০ কোটি দিল মুকেশের সংস্থা, সাহায্য গুজরাত-মহারাষ্ট্রকেও

বিলাসবহুল ওই রিসর্টের নাম গ্র্যান্ড হোটেল সোনেনবিখল । জার্মানির জার্মিশ পার্টেনকার্চেন শহরে আল্পস পর্বতের পাদদেশে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এই হোটেলে রয়েছে আরাম আয়েশের সব রকম বন্দোবস্ত। কিন্তু আপাতত করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য ওই এলাকার সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জার্মান প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও ওই হোটেলে এ ভাবে বুকিং দিল কী করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ? স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ‘দ্য বিল্ড’ জানিয়েছে, যেহেতু অতিথিরা একই দলের এবং আর কেউ আসা-যাওয়া করবেন না, তাই বিশেষ অনুমতি পেতে অসুবিধে হয়নি হোটেল কর্তৃপক্ষের।

তাইল্যান্ডে মহা বাজিরালংকর্নর রাজত্ব শুরু হয় ২০১৬ সালে তাঁর বাবা রাজা ভূমিবলের মৃত্যুর পর। ৭০ বছর ধরে শাসন করেছেন ভূমিবল। কিন্তু দেশে বা আন্তর্জাতিক মহলে বাবা ভূমিবলের মতো জনপ্রিয় নন বাজিরালংকর্ন। কিন্তু রাজ আইনের কোপে পড়ার ভয়ে কেউ তাঁর সমালোচনা করতেও সাহস পান না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জেরে সবাই বিপন্ন। তাই এখন সেই সব শাস্তির খাঁড়া উপেক্ষা করেই চলছে সমালোচনা। তাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের সমালোচক সমাজকর্মী বর্তমানে ফ্রান্সে স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সোমস্যাক জিমতিরাসাকুল আবার আরও বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। একাধিক ফেসবুক পোস্টে তাঁর দাবি, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু হওয়ার সময় মার্চের গোড়াতেই দেশ ছেড়েছেন রাজা। একাকিত্ব কাটাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানির মতো বিভিন্ন দেশে। আবার ব্রিটেনের দৈনিক ‘দ্য টাইমস’-এর খবর, ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশে দেখা যায়নি তাইল্যান্ডের রাজাকে। ফলে করোনার ভয়েই দেশ ছেড়েছেন কিনা, জার্মানির ওই হোটেলে ওঠার পর সেই প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে।

আরও পড়ুন: দিল্লির মসজিদে জমায়েত, কোয়রান্টিনে পাঠানো হল ২০০০ জনকে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটেনের রাজপুত্র প্রিন্স চার্লস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন টুডোর স্ত্রী। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক জাহাঙ্গিরি ও ডেপুটি হেল্থ মিনিস্টার ইরাজ হারিরচির আক্রান্ত হওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে রয়েছে। এ ছাড়া বহু দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ। নেতা থেকে জনতা—সবাই বেছে নিচ্ছেন সেল্ফ কোয়রান্টিন বা আইসোলেশন। কিন্তু এ ভাবে ‘আইসোলেশন’-এ যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। অনেকেরই প্রশ্ন, এটা আইসোলেশন, নাকি জনগণের অর্থে আমোদ-প্রমোদে দিন কাটানোর অছিলা?

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী শেয়ার করুন আমাদের ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায় কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন