মাটি ঘেঁষা উৎসই কাল হল ইতালির

তীব্রতা কম। কিন্তু তার সঙ্গে গভীরতাও কম হওয়ায় বিপর্যয় ঘাড়ে এসে পড়ল হুড়মুড়িয়ে। বুধবার সকালে কেঁপেছিল ইতালি। ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৬.২ রিখটার। বিকেলে কাঁপল মায়ানমার। সেখানে তীব্রতা আরও বেশি, রিখটার স্কেলে ৬.৮। অথচ ক্ষতির নিরিখে ইতালি টপকে গিয়েছে মায়ানমারকে! কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

আরও পড়ুন। তীব্রতা কম। কিন্তু তার সঙ্গে গভীরতাও কম হওয়ায় বিপর্যয় ঘাড়ে এসে পড়ল হুড়মুড়িয়ে।

Advertisement

বুধবার সকালে কেঁপেছিল ইতালি।
ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৬.২ রিখটার। বিকেলে কাঁপল মায়ানমার। সেখানে তীব্রতা আরও বেশি, রিখটার স্কেলে ৬.৮। অথচ ক্ষতির নিরিখে ইতালি টপকে গিয়েছে মায়ানমারকে! কেন?

রহস্য লুকিয়ে আছে কম্পনের উৎসস্থলের গভীরতার মধ্যে। মার্কিন ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানাচ্ছে, ইতালির ভূকম্পের উৎসস্থল মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার নীচে। যেখানে মায়ানমারে তা প্রায় ৮৪ কিলোমিটার তলায়। ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কম্পনের উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠের যত কাছে হয়, তার প্রভাবও পড়ে তত বেশি।

Advertisement

এটাই ইতালি-মায়ানমারে ফারাক গড়ে দিয়েছে। কম গভীরতাই কাল হয়েছে ইতালির। বুধবার রাত পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। মধ্য ইতালির আমাত্রিস শহরটি কার্যত ধুলো হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে মায়ানমারে মৃতের সংখ্যা মাত্র এক জন। বেশ কিছু পুরনো প্যাগোডা ও জীর্ণ ঘরবাড়ি ভাঙা ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি।

তীব্রতা এত কম হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ গভীরতার অভাবে এমন বিপর্যয়ের কারণ কী? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভূগর্ভে একটি প্লেট যখন অন্য প্লেটের তলায় ছেঁচড়ে ঢোকে, তখনই ভূমিকম্প দেখা দেয়। ইতালি এ দিন কেঁপেছে ইউরেশীয় ও আফ্রিকা প্লেটের ঘর্ষণে। ওই তল্লাটে ইউরেশীয় প্লেট বছরে ২৫ মিলিমিটার গতিতে আফ্রিকা প্লেটের তলায় ঢুকছে। ভূ-বিজ্ঞানী সুগত হাজরার ব্যাখ্যা: প্লেটের এই সরণ কখনও বাধা পেয়ে আটকে থাকে। তাতে উৎসস্থলে ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে, সঞ্চিত হতে থাকে শক্তি। ক্রমাগত চাপের মুখে বাধা সরে গেলে সঞ্চিত শক্তি ঠিকরে বেরিয়ে আসে। উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠের অনেক নীচে থাকলে সেই শক্তি ভূস্তরে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটা কমজোরি হয়ে পড়ে। তাতে ক্ষতি হয় কম। আর উল্টোটা হলেই সর্বনাশ।

যা হয়েছে ইতালিতে। ভূ-বিজ্ঞানীদের হিসেবে, এ দিন মধ্য ইতালির ভূমিকম্পে নির্গত শক্তির পরিমাণ ছিল হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমার দ্বিগুণ। খড়্গপুর আইআইটি-র ভূ-পদার্থবিদ শঙ্করকুমার নাথের কথায়, ‘‘মায়ানমারের ভূকম্পে হিরোশিমার বোমার প্রায় ১৬ গুণ বেশি শক্তি নির্গত হয়েছে। তবু ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে উৎসস্থলের গভীরতার সুবাদে।’’ ভূ-বিজ্ঞানী সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই মায়ানমারে ৫.৩ মাত্রার ভূকম্প হয়েছিল। মাটির প্রায় ১০৬ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় তা প্রায় টেরই পাওয়া যায়নি।

স্বল্প গভীরতার কম্পনের বিপদ প্রসঙ্গে নেপাল ভূকম্পের কথাও বলছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। ২০১৫-র ২৫ এপ্রিল নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূকম্পটির উৎস ছিল মাটির সাকুল্যে ৮.২ কিলোমিটার নীচে। বিপুল তীব্রতার পাশাপাশি গভীরতার অভাবে সেখানে প্রকৃতি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এমনকী, মাউন্ট এভারেস্টে তুষারধস নামে। সুনামির ক্ষেত্রেও তা-ই।

কয়েক ঘণ্টার ফারাকে ইতালি ও মায়ানমারের ভূমিকম্পের মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?

ভূতত্ত্ববিদদের মতে, সম্পর্ক নেই। নেহাতই কাকতালীয়। ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, একই দিনে নানা জায়গায় ভূকম্প আকছার হয়। তীব্রতা কম থাকায় সেগুলো বিশেষ সাড়া ফেলে না। শঙ্করনাথবাবু জানান, ভারতীয় প্লেট বছরে ৩৫ মিলিমিটার গতিতে বর্মা প্লেটের তলায় ঢুকছে। তারই জেরে এ দিন মায়ানমার কেঁপেছে। মণিপুরে গত এপ্রিলের ভূকম্পের কারণও তা-ই।

বস্তুত ভারত ও বর্মা প্লেটের ‘ঠোকাঠুকি’ নিয়ে ভূতত্ত্ববিদেরা কাঁটা হয়ে আছেন। ওঁদের আশঙ্কা, এতে উত্তর-পূর্ব ভারত ও তার আশপাশ যথেষ্ট ভূকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এমনকী, এখানে ভবিষ্যতে ৮ রিখটার মাত্রার বিধ্বংসী কম্পনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন...

তীব্র ভূকম্প মায়ানমারে, কাঁপল পড়শি দেশগুলিও

ভোররাতের কাঁপুনিতে ধূলিসাৎ ইতালির শহর, মৃত ৭৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন