হারিয়ে: দাবানলে পুড়ে খাক গাড়ি। রবিবার পর্তুগালের ফিগাইরো দস ভিনোস শহরে। ছবি:এএফপি
আকাশে তাকালে চোখে পড়বে পুরু কালো ধোঁয়ার স্তর। পর্তুগালের জঙ্গলে আগুনের বলি হতে হয়েছে অন্তত ৬২ জনকে।
শনিবার রাত থেকে আগুন লাগে দক্ষিণ-পশ্চিম কয়েম্ব্রার পেডরোগাও গ্রান্ডে এলাকায়। জঙ্গলে অন্তত ৬০টি জায়গায় আলাদা আলাদা ভাবে আগুন জ্বলছে। ১৭০০ দমকলকর্মী আগুন নেভানোর কাজে নেমেছেন। এখনও পর্যন্ত জখম ৫৯ জন।
মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনিও কোস্টা জানান, সাম্প্রতিক কালে এত বড় দাবানল আগে হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। শনিবার রাত থেকেই দমকলের ১৬০টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। সূত্রের খবর, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পেডরোগাও গ্রান্ডের মিউনিসিপ্যালিটি সংলগ্ন এলাকাতেও। তাপপ্রবাহের মুখে পড়েছেন বাসিন্দারা।
পর্তুগালের অভ্যন্তরীণ প্রতিমন্ত্রী জর্জ গোমস রবিবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত আগুনে পুড়ে মোট ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাড়ির ভিতরে আটকে পড়ে মারা গিয়েছেন অন্তত ২২ জন। জখম ৫৯। তাঁদের মধ্যে চার দমকলকর্মী ও একটি শিশু-সহ ১৮ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে শুকনো হাওয়ার কারণে আগুন ছড়িয়েছে হু হু করে। স্থানীয় বাসিন্দা ইসাবেল ব্রান্ডা বললেন, ‘‘গতকালই আগুনটা দেখতে পেয়েছিলাম। তবে তখন অনেক দূরে ছিল। এত কম সময়ে যে এদিকেও ছড়িয়ে পড়বে ভাবিনি। গতকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ আমার শাশুড়ির ঘুম ভেঙে য়ায়। তার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও ভয়ে ঘুমোতে পারিনি।’’
জঙ্গল সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাণে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন অনেকেই। আনসিয়াওয়ের বাসিন্দা রিকার্ডো ত্রিস্তাও জানালেন, ‘‘ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছ ঘরদোর। আর সেখানে বসে বসে মরতে চাই না।’’ ঘরহীনদের লেইরিয়া জেলার আনসিয়াও মিউনিসিপ্যালিটিতে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
এখনও পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ সঠিক ভাবে জানা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে পর্তুগালকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে টুইট করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। ঘটনাস্থলে দু’টি জলকামানবাহী বিমানও পাঠিয়েছে স্পেন। রবিবার রোমে বসেই পর্তুগালবাসীর জন্য প্রার্থনা করেন পোপ ফ্রান্সিস।
গ্রীষ্মকালে মাঝেমধ্যেই দাবানলের মুখোমুখি হয় পর্তুগাল। গত বছরও দাবানলে পুড়ে গিয়েছিল প্রায় ২৪৭ হাজার একর জমি। তবে এ বারে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দাবদাহ। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনিও জানান, খুব শিগগিরই দাবানলে হতাহতদের জন্য জাতীয় শোকও ঘোষণা করা হবে।