International News

দিল্লি হিংসা নিয়ে কেন মুখ খুলল ইরান, চিন্তা ভারতের

ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে কেউ বলতে পারে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৬:১২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

হিসেবটা এখনও মিলছে না নয়াদিল্লির।

Advertisement

ইসলামিক গোষ্ঠীতে ভারতের অন্যতম খুঁটি, পাকিস্তানকে এড়িয়ে পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্য করার একমাত্র সহায় এবং কিছু দিন আগে পর্যন্ত প্রধান শক্তি-সহচর ইরানের, দিল্লি হিংসা নিয়ে তীব্র সমালোচনায় হতভম্ব সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, চেষ্টা চলছে তেহরানের সঙ্গে দৌত্যের মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করার। পাশাপাশি এটাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে, কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে কেন হঠাৎ এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল ইরান। তবে বিদেশ মন্ত্রকের ঘরোয়া পর্যায়ে বক্তব্য, ইসলামিক গোষ্ঠীর (ওআইসি) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেরু ইরানের এই ভূমিকা, সার্বিক পশ্চিম এশিয়া নীতির প্রশ্নে ভারতের জন্য অস্বস্তিকর ঠিকই। কিন্তু সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো রাষ্ট্র (ওআইসি-র অর্থনীতির মূল চালক) যত ক্ষণ ভারতের পাশে রয়েছে, খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে প্রথম তোপটি দেগেছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফ, যার সঙ্গে মোদী সরকারের সুসম্পর্ক সুবিদিত। আর তার পরে সে দেশের শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই টুইট করে বিষয়টির শুধু নিন্দাই করেননি। প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে জানিয়েছেন, ‘ভারত সরকারের উচিত চরমপন্থী হিন্দুদের মোকাবিলা করা। ইসলাম দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না চাইলে, ভারত এই অত্যাচার বন্ধ করুক।’

Advertisement

আরও পড়ুন: হোর্ডিংয়ে প্রতিবাদী মুখ কেন, ক্ষুব্ধ কোর্ট

নয়াদিল্লির ধন্দের কারণ, পুরনো বন্ধু ইরান বিরল এক ইসলামিক রাষ্ট্র, যাদের সে ভাবে পাকিস্তানপন্থী অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। কাশ্মীর নিয়েও বড় একটা ভারত-বিরোধী অবস্থান নেননি খামেনেই-ও। যদিও বা কিছু বলেছেন, তা একান্তই উপর উপর। ইরানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির নেতারা অবশ্যই ভারত তথা মোদী সরকারের বিরোধিতায় সময়ে সময়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু সে দেশের সরকারের এই ‘বিস্ফোরণ’ একান্তই আকস্মিক বলেই মনে করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, বিষয়টি বিস্ময়কর কারণ, ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে আমেরিকা হত্যা করার পরে ভারতই সর্বপ্রথম দেশ যারা ইরানের এই বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফকে মঞ্চ দিয়েছিল তাঁর বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। সে সময়ে মার্কিন চাপ অগ্রাহ্য করেও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্মেলন ‘রাইসিনা সংলাপে’ জারিফকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। জারিফও ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমেরিকার ভূমিকার নিন্দা করেছিলেন।

সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঢক্কানিনাদ পূর্ণ ভারত সফরের ঠিক পরেই ইরান গর্জে উঠেছে দিল্লির হিংসা নিয়ে। এই দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান থেকে তেল আমদানি আপাতত বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে নয়াদিল্লি। বহু কষ্টে ইরানের চাবাহার বন্দরে বিনিয়োগ এবং ব্যবহারের অনুমোদন আদায় করা গিয়েছে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে। এই অবস্থায়, মোদী সরকারকে চাপে রেখে এবং ইসলামিক দুনিয়া থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তেহরান নয়াদিল্লির সঙ্গে দরকষাকষির জায়গাটিকে পোক্ত করার চেষ্টা করেছে— এমনটা মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ। এর আগে আমেরিকার সঙ্গে প্রথম ‘টু প্লাস টু’ মঞ্চে বৈঠকের পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছে তেহরানে। ভারত-ইরান সম্পর্কে যাতে ‘টু প্লাস টু’ কোনও ছায়া ফেলতে না পারে সেটা নিশ্চিত করাটাই ছিল ওই ব্যগ্রতার কারণ, জানাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। পাশাপাশি এটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে সৌদি আরবের সঙ্গে না হলেও মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত প্রভাবশালী সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের এখন উন্নতি হচ্ছে। বাণিজ্যিক কারণে ওই আরব দেশ নিজেরা মুখে মোদী সরকারের ভূমিকার নিন্দা না করে ইরানকে দিয়ে করাচ্ছে কি না, সেটাও বোঝার চেষ্টা চলছে।

ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে কেউ বলতে পারে না। পাশাপাশি সে দেশের চাবাহার বন্দরে ইতিমধ্যেই বিপুল বিনিয়োগ করে বসে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান তথা পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে চাবাহারই একমাত্র ভরসা ভারতের। তাই সম্পর্কে কেন এতটা ক্ষত তৈরি হল তা বুঝে, তাতে মলম লাগানোর চেষ্টা এখন মোদীর অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে বলে কূটনৈতিক শিবিরের মতামত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন