ডায়েট-ব্যায়াম যুগলবন্দি, মেদ ঝরাচ্ছে পশুরাও

সময়টা বসন্ত কাল হলে কি হবে, এক বছর আগে দখিনা হাওয়ার আমেজ নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না টিআর-এর। একেই ওজনের ঠেলায় হাঁটাচলা দায়। তার উপর দোসর, সব সময়ের ক্লান্তিবোধ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইলিনয় শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

সময়টা বসন্ত কাল হলে কি হবে, এক বছর আগে দখিনা হাওয়ার আমেজ নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না টিআর-এর। একেই ওজনের ঠেলায় হাঁটাচলা দায়। তার উপর দোসর, সব সময়ের ক্লান্তিবোধ।

Advertisement

টিআর অবশ্য একা নয়, তার প্রতিবেশী বেনি বা মলির দশাও ছিল কতকটা তারই মতো। সেই অস্বস্তির মধ্যেই গত বসন্তের কোনও এক দিনে এসেছিল মন খারাপ করে দেওয়া খবরটা। টিআর, মলিদের নিয়ে পিওরিয়া শহরের পত্রিকা ‘স্টার’-এ লেখা হয়েছিল— ‘‘ওরা বড্ড মোটা’’।

ওজন নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা আর সহ্য হয়নি। রোগা হওয়ার শপথটা সে দিন নিয়েই নিয়েছিল মলিরা। না, না, তড়িঘড়ি ডায়েটিশিয়ানের চেম্বারে দৌড়য়নি তারা। লাইপোসাকশান অস্ত্রোপচার করায়নি বা খায়নি ওজন কমানোর কোনও বড়িও। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কেল্লাফতে। বেশ কয়েক পাউন্ড ঝরিয়ে টিআর, মলি ও বেনিরা এখন এক্কেবারে ‘স্লিম-ট্রিম’।

Advertisement

রহস্যটা কী? টিআর তো আর মুখ ফুটে বলতে পারে না। তাই তার হয়ে এক বছরের মেহনতের কাহিনি শুনিয়েছেন ইলিনয়ের ‘ওয়াইল্ডলাইফ প্রেইরি পার্ক’-এর কিউরেটর অ্যাডরিয়েন বাউয়ের। টিআর, মলি, বেনিরা আসলে এই পার্কেরই বাসিন্দা। টিআর হল এক লোমশ কালো ভালুক। তার প্রতিবেশী বেনি মার্কিন মুলুকেরই বনবিড়াল। আর মলি মেয়ে ভল্লুক। অ্যাডরিয়েন জানান, গত এক বছর ধরে রীতিমতো ডায়েট মেনে খাবার খেয়েছে এরা। সঙ্গে চলেছে নিয়মিত শারীরিক কসরতের পালা।

রোগা হওয়ার চক্করে যাঁরা কখনও না কখনও ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের দ্বারস্থ হয়েছেন, ডায়েট আর একটু শরীরচর্চা— এই শব্দবন্ধ একেবারে গেঁথে গিয়েছে তাঁদের মাথায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে সেই রুটিন মেনে চলতে পারেন না অনেকেই। ফলে দোহারা চেহারার স্বপ্ন মনেই থেকে যায়।

অ্যাডরিয়েনের অবশ্য দাবি, রোগা হওয়ার চেষ্টায় টিআরদের তরফে খামতি ছিল না এতটুকু। কম মিষ্টি, বেশি করে সবুজ শাক পাতা খাওয়া আর সারা দিন দৌড় ঝাঁপ— গোটা এক বছর এই জীবনেই দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে ইলিনয়ের এই বন্যপ্রাণ উদ্যানের বাসিন্দারা।

কিউরেটর আরও জানান, খাবার দেওয়ার পদ্ধতিও খানিকটা বদলেছিলেন তাঁরা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিকার করতে হয় না, তার বদলে খাবার একেবারে মুখে কাছে জুগিয়ে দেওয়া হয় বলে চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের মধ্যে মোটা হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। সেটা ঠেকাতে ইলিনয়ের এই পার্কে বাসিন্দাদের খাবার-দাবার একটু লুকিয়ে রাখা শুরু করেন অ্যাডরিয়েন ও তাঁর দলবল। ফলও মেলে সহজে। সারাদিন গা এলিয়ে শুয়ে বসে দিন না কাটিয়ে খিদের তাগিদেই হাঁটাচলা শুরু করে তারা।

বছর শেষে পরীক্ষায় রীতিমতো স্টার নম্বর নিয়ে পাশ করেছে টিআর, মলিরা। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুচিকিৎসক পড়ুয়াদের নেওয়া পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে টিআর। অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে সে এখন ৬০০ পাউন্ডের। প্রায় ৫০ পাউন্ড কমিয়ে মলি তো রীতিমতো তন্বী। পিছিয়ে নেই বনবিড়াল বেনিও। গত এক বছরে কমে গিয়েছে তার চর্বি। ৪১ পাউন্ড থেকে ওজন এসে ঠেকেছে মোটে ৩০ পাউন্ডে।

ওজন যেমন কমছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই পার্কে দর্শকদের সংখ্যা। শুয়ে-বসে না থেকে পার্কের বাসিন্দারাও এখন মেতে রয়েছে দিনভর নানা খেলায়। তাদের জীবনে বসন্ত সত্যিই এসে গিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন