দূর-দৃষ্টি
Mimi Chakraborty

সাউথ সিটিতে লিফলেট বিলি করছেন মিমি!

ভোটে কাঠি পড়ে গিয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে। আগামী দু’মাস ধরে চলবে নির্বাচনী প্রচার, মিটিং, মিছিল, টিভিতে বিতর্ক– এক কথায় ‘গণতন্ত্রের উৎসব’!

Advertisement

শুভময় গঙ্গোপাধ্যায়

অকল্যান্ড (নিউজ়িল্যান্ড) শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

মিমি চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।

ভোটে কাঠি পড়ে গিয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে। আগামী দু’মাস ধরে চলবে নির্বাচনী প্রচার, মিটিং, মিছিল, টিভিতে বিতর্ক– এক কথায় ‘গণতন্ত্রের উৎসব’! এই সময়ে আসুন, চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক অন্য একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে। সেই দেশটাও এক কালে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের ছোট্ট দেশটা ক্রিকেট খেলে বলে ভারতীয়দের কাছে বেশ পরিচিত নাম। আর দশ দিন আগে ক্রাইস্টচার্চে এক শ্বেত জঙ্গির হামলা এই দেশটিকে খবরের শিরোনামে নিয়ে এসেছে।

Advertisement

সেই সঙ্গেই চর্চা শুরু হয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আটত্রিশ বছরের জেসিন্ডা আর্ডের্নকে নিয়ে। বহির্বিশ্বের সংবাদমাধ্যম জেসিন্ডাকে নিয়ে অবশ্য লেখালিখি শুরু করে ২০১৭-তে, যখন বেশ অল্প বয়সেই তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮-তে যখন তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন, তখনও জেসিন্ডাকে নিয়ে কিঞ্চিৎ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আর ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে তিনি তো নেতৃত্বের নজির গড়ছেন। ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী যে তৎপরতার সঙ্গে সেখানে পৌঁছে বিবৃতি দিয়েছেন, যে সহমর্মিতা নিয়ে স্বজন-হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন,

যে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দেশের শরণার্থী ও সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করেছেন— সেই নেতৃত্বের সহানুভূতি ও বলিষ্ঠতা প্রশ্নাতীত।

Advertisement

কাগজে-কলমে অবশ্য এখনও নিউজ়িল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটেনের রানি, তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেন এক জন গভর্নর জেনারেল। তবে রানি নামেই রাষ্ট্রপ্রধান। দেশের সরকার পরিচালনা করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা, নেতৃত্বে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সকলেই পার্লামেন্টেরও সদস্য, অনেকটা ভারতবর্ষের মতোই সংসদীয় এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র। বড় দল বলতে দু’টি— ন্যাশনাল পার্টি এবং লেবার পার্টি। কিন্তু সাধারণত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দলই পায় না, অতএব জোট সরকার। ভারতের সঙ্গে অনেক মিল যেমন দেখতে পাচ্ছেন, তেমন বেশ কিছু ফারাকও আছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য বোধহয় এটা— নিউজ়িল্যান্ডের নাগরিকেরা সংসদীয় নির্বাচনে একই সঙ্গে দু’টো ভোট দেন— একটা প্রার্থীর জন্য, আর একটা দলের জন্য। ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার।

ধরুন, আপনি পশ্চিমবঙ্গের ভোটার। মনে করুন, আপনার লোকসভা কেন্দ্রের ‘ক’ দলের প্রার্থীকে আপনার পছন্দ। আপনি চান ভোটে জিতে তিনিই সাংসদ হোন। কিন্তু আপনি এ-ও চান যে, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসুক ‘খ’ দল। অথচ আপনি দিতে পারবেন একটাই ভোট! তা হলে শ্যাম রাখবেন, না কুল? নিউজ়িল্যান্ডের মতো ব্যবস্থা হলে আপনার হাতে থাকত দু’টো ভোট— একটা আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রের পছন্দের প্রার্থীর জন্য, অন্যটা আপনার প্রিয় দলের জন্য। দলের জন্য দেওয়া ভোটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় কোন দলের মোট ক’জন সংসদ সদস্য থাকবে। নির্বাচিত প্রার্থীরা তো সাংসদ হবেনই, বাকি আসনগুলো ভরানো হবে দল-মনোনীত সাংসদ দিয়ে। ফর্মুলার বহর দেখে মনে হয়, এটা বীজগণিতের ভাল প্রশ্ন হতে পারে— ‘অমুক পার্টি যদি খ শতাংশ পার্টিভিত্তিক ভোট পায় এবং সেই পার্টির যদি গ সংখ্যক নির্বাচিত সাংসদ থাকে, তা হলে তাদের ক’জন মনোনীত সাংসদ থাকবে’!

নিউজ়িল্যান্ডের ভোটের প্রচার অবশ্য ভারতবর্ষের ভোটের তুলনায় বর্ণহীন। ব্রিগেডের মতো মিটিং নেই, স্লোগান দেওয়া মিছিল নেই, শুধু টিভিতে আর খবরের কাগজে কিছু আলোচনা, কিছু বিতর্ক, রাস্তার ধারে কোথাও কোথাও ভোটপ্রার্থীদের প্ল্যাকার্ড। এক দিন হয়তো পাড়ার সুপার মার্কেটে বাজার করতে ঢুকেছেন— দেখলেন স্যুট-পরিহিত একজন হাসি হাসি মুখে আপনার হাতে একটা সচিত্র লিফলেট ধরিয়ে দিলেন। আপনি অন্যমনস্ক হয়ে কাগজটা নিয়ে অনেক পরে খেয়াল করলেন, ওটা আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রের এক প্রার্থীর আবেদন। আর কাগজের ছবিটা দেখে আপনি বুঝলেন, আরে, এই প্রার্থীই তো আমার হাতে কাগজটা গুঁজে দিলেন। ভাবুন তো, কেমন হতো যদি আপনি সাউথ সিটি মলে বাজার করতে গিয়ে দেখেন, যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী দাঁড়িয়ে জনে জনে লিফলেট বিলি করছেন?

লেখক অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন