Gaza Strip

গাজ়ায় খিদে-তেষ্টার জ্বালা আরও প্রকট হচ্ছে, ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন চিকিৎসক এবং নার্সেরা! ত্রাণ মিললেও কাটছে না আশঙ্কা

গাজ়ায় ত্রাণ পাঠানোর উপর থেকে ইজ়রায়েলি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার পরেই বিভিন্ন দেশ আকাশপথে গাজ়ায় ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং জর্ডন থেকে ২৫ টন ত্রাণসামগ্রী প্যারাশুটে করে গাজ়ায় নামানো হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ২১:১৪
Share:

গাজ়ায় খাবারের জন্য হাহাকার। ছবি: রয়টার্স।

গাজ়া ভূখণ্ডে খাদ্যসঙ্কটের পরিস্থিতিতে ক্রমশ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল ইজ়রায়েলের দিকে। এরই মধ্যে রবিবার থেকে গাজ়ার তিনটি অঞ্চলে সামরিক অভিযানে দিনে ১০ ঘণ্টার কৌশলগত বিরতি ঘোষণা করেছে ইজ়রায়েল। তবে খাদ্যসঙ্কট এখনও রয়েই গিয়েছে। গাজ়া ভূখণ্ডের যে হাসপাতালগুলি এখনও সচল রয়েছে, সেখানে রোগী পরিষেবা দিতে দিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নার্সেরা। খিদে এবং তেষ্টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন নার্সদের অনেকে।

Advertisement

রোগী এবং চিকিৎসাকর্মীদের জন্য সবসময় খাবারের জোগান দিয়ে উঠতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সদ্যোজাতদের জন্য দুধেরও পর্যাপ্ত জোগান নেই হাসপাতালগুলিতে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের শুধুমাত্র জল খাইয়ে রাখা হচ্ছে। গত শুক্রবার থেকে গাজ়ায় সাত জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইম্স। এই সাত জনের মধ্যে চার জন গাজ়ার বাসিন্দা। বাকি তিন জন অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকা থেকে গিয়ে সেখানে পরিষেবা দিচ্ছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই বর্তমানে গাজ়া ভূখণ্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।

গত কয়েক মাসে ইজ়রায়েলের ধারাবাহিক হামলা এবং তার জেরে তৈরি হওয়া খাদ্যাভাবের জেরে গোটা গাজ়া ভূখণ্ডে তীব্র খাদ্যসঙ্কট তৈরি হয়েছে। গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক শনিবার জানিয়েছে, শুধুমাত্র চলতি মাসেই অন্তত ৫৬ জন প্যালেস্টাইনির অনাহারে মৃত্যু হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাজ়া ভূখণ্ডে খাবারের জন্য হাহাকার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালের কর্মীরাও দিনে দিনে অপুষ্টির শিকার হতে শুরু করেছেন। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ অনুসারে, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করতে শুরু করেছেন। অনেকে মাথা ঘুরে ওয়ার্ডেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। স্যালাইন, গ্লুকোজ় দিয়ে তাঁদের আবার সুস্থ করতে হচ্ছে।

Advertisement

গাজ়ায় প্যালেস্টাইনিদের নিয়ন্ত্রিত কিছু এলাকায় দোকানগুলিতে এখনও কিছু খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার দাম যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়াবাসীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোথাও এক কেজি আটা বা এক কেজি টম্যাটো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা)। চাল বা মাংস খোলাবাজারে বিক্রিই হচ্ছে না। এর ফলে সাধারণ গাজ়াবাসীর কাছে বিকল্প বলতে দু’টি পথই খোলা থাকছে। প্রথম বিকল্প, অনাহারে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া। দ্বিতীয় বিকল্প, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসরবরাহ কেন্দ্রের দিকে যাওয়া। সাম্প্রতিক সময়ে ত্রাণশিবিরের দিকে যাওয়ার পথে ইজ়রায়েলি বাহিনীর হামলায় অনেক সাধারণ প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।

আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে গাজ়া ভূখণ্ডে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইজ়রায়েল। আকাশপথে বস্তা বস্তা ত্রাণ ফেলছে তারা। শনিবার ইজ়রায়েলের সেনা (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজ়ায় সাত বস্তা ময়দা, চিনি এবং খাবারের ক্যান ফেলা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। দাবি করা হচ্ছে, একটি ট্রাকেও তার চেয়ে বেশি খাবার ধরে। এরই মধ্যে রবিবার ইজ়রায়েল জানিয়েছে, গাজ়া ভূখণ্ডের তিনটি এলাকা— আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ্ এবং গাজ়া শহরে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ত্রাণকার্যের জন্য ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু রাস্তা খুলে দেওয়া হবে। ত্রাণকার্যে সহায়তা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি ইজ়রায়েলের।

গাজ়ায় ত্রাণ পাঠানোর উপর থেকে ইজ়রায়েলি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার পরেই বিভিন্ন দেশ আকাশপথে গাজ়ায় ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং জর্ডান থেকে ২৫ টন ত্রাণসামগ্রী প্যারাশুটে করে গাজ়ায় নামানো হয়েছে। তবে যে ত্রাণসামগ্রী আসবে, তা পর্যাপ্ত হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অতীতে যে ভাবে ত্রাণশিবিরমুখী মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, তাতে পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement